হোম > জীবনধারা > মানসিক স্বাস্থ্য

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে পারে এই ৭ টনিক

ফিচার ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

কাজের চাপ, অনিদ্রা, ক্লান্তি এখন প্রায় সবার জীবনের অংশ। এমন অবস্থায় অনেকে কফি বা এনার্জি ড্রিংক পান করেন। এর বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক কিছু পানীয় দারুণ কাজ করে। ঘরোয়া উপাদানে তৈরি এসব টনিক শরীরের ক্লান্তি কমায়, মন ভালো রাখে আর উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

প্রাচীনকালে যখন চিকিৎসক ও হাসপাতালের আধিক্য ছিল না, তখন মানুষের চিকিৎসার প্রধান উপকরণ ছিল বিভিন্ন ভেষজ উপাদান। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তবে এগুলোর উপকারিতা ফল একটু ধীরে পাওয়া যায়। বর্তমানে মানুষ সবকিছু দ্রুত চায়। এ জন্য তারা ওষুধের ওপরে বেশি নির্ভরশীল হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, ওষুধ কোনো সমস্যার দ্রুত সমাধান দিলেও স্থায়ী সমাধান দিতে পারে না। সে সব ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি এ সকল প্রাকৃতিক উপাদানের ওপরে আস্থা রাখা যেতে পারে। এগুলোর ফল ধীর হলেও স্থায়ী সমাধান পাওয়া যেতে পারে। তবে ভেজাল পণ্য ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ সকল ভেষজ ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মো. ইকবাল হোসেন সিনিয়র পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম

আদা: মস্তিষ্ক সতেজ রাখে, মনোযোগ বাড়ায়

রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি আদা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। এতে রয়েছে ১৪টি অনন্য যৌগ ও শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এসব মানসিক চাপ কমায় এবং মস্তিষ্ক ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, আদা আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধেও সহায়ক হতে পারে।

উপকারিতা: মনোযোগ বৃদ্ধি, স্ট্রেস কমানো, মস্তিষ্কের সুরক্ষা।

সতর্কতা: একবারে ৪ গ্রামের বেশি না খাওয়াই ভালো। তা না হলে পেটে অস্বস্তি হতে পারে।

মাকা রুট: হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে

পেরুর পাহাড়ি অঞ্চলের এই উদ্ভিদ এখন সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। এটি হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা, রক্তচাপ কমানো ও মানসিক অবসাদ দূরে সাহায্য করে; বিশেষ করে, মেনোপজ-পরবর্তী নারীদের মুড ভালো রাখতে মাকা দারুণ কাজ করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

উপকারিতা: শক্তি বাড়ায়, মন ভালো রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

সতর্কতা: গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী বা থাইরয়েড সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য নয়।

ম্যাচা চা: ক্যাফেইনের বিকল্প

সবুজ চায়ের গুঁড়া ম্যাচা এখন স্বাস্থ্যসচেতনদের কাছে খুব জনপ্রিয়। এতে আছে এল-থিয়ানিন উপাদান, যা শরীরকে প্রশান্তি দেয়। এ ছাড়া মন শান্ত থাকে, চিন্তা ও উদ্বেগ কমায়। ঘুম পায় না বলে সারা দিন মনোযোগ ধরে রাখা সহজ। ম্যাচায় থাকা সামান্য ক্যাফেইন একদিকে শক্তি জোগায়, অন্যদিকে মন সতেজ রাখে। তাই অনেকে কফির পরিবর্তে ম্যাচা চা পান করতে পছন্দ করেন।

উপকারিতা: মন শান্ত রাখে, মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখে, ক্লান্তি কমায়।

সতর্কতা: দিনে এক-দুই কাপের বেশি না খাওয়াই ভালো।

রেইশি মাশরুম: প্রাকৃতিক উপায়ে মানসিক প্রশান্তি

‘প্রকৃতির জ্যানাক্স’ নামে পরিচিত রেইশি মাশরুম শরীর ও মন—দুটিই শান্ত রাখে। এতে থাকা ট্রাইটারপিন নামের উপাদান স্নায়ু শান্ত করে। এর ফলে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কমে যায়। এ ছাড়া ঘুম ভালো করতে এবং মনের অস্থিরতা বা বিষণ্নতা কমাতে সাহায্য করে।

উপকারিতা: ঘুম ভালো করে, মন শান্ত রাখে, উদ্বেগ কমায়।

সতর্কতা: গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারীকে এবং লিভারের সমস্যা থাকলে সতর্ক থাকতে হবে।

আপেল সিডার ভিনেগার: শক্তি বাড়ায় ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে

সালাদের স্বাদ বাড়ায় এই আপেল সিডার ভিনেগার। এটি তো সবার জানা। কিন্তু এটি শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বেশ সাহায্য করে। এতে থাকা খনিজ পদার্থ, বিশেষ করে, পটাশিয়াম, শরীরের ক্লান্তি দূর করে ও শক্তি ঠিক রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি বিষণ্নতা কমাতেও সাহায্য করে।

উপকারিতা: রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, শক্তি বাড়ানো, সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নতি।

সতর্কতা: অতিরিক্ত সেবনে দাঁতের এনামেল ক্ষয় বা গলা জ্বালা হতে পারে।

হলুদ: মানসিক সুস্থতার সহায়ক মসলা

হলুদের প্রধান উপাদান কারকিউমিন মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মাত্রা বাড়ায়। এগুলো আমাদের মানসিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মন ভালো থাকে, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা কমে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে হলুদ খেলে অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের মতো মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

উপকারিতা: উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমায়, মন ভালো রাখে, মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখে।

সতর্কতা: অতিরিক্ত সেবনে কিডনিতে পাথর হতে পারে, নিম্নমানের পণ্যে ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে।

অশ্বগন্ধা: স্ট্রেস কমানোর প্রাচীন ভেষজ

অশ্বগন্ধা প্রাচীন আয়ুর্বেদিক ভেষজ। এটি শরীরকে মানসিক চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। এটি শরীরে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমিয়ে মনকে শান্ত রাখে। নিয়মিত সেবনে উদ্বেগ, ক্লান্তি ও মানসিক চাপ কমে যায়।

উপকারিতা: স্ট্রেস কমায়, মন শান্ত রাখে, ক্লান্তি দূর করে।

সতর্কতা: গর্ভবতী নারীদের জন্য নয়, নিম্নমানের উৎসের পণ্য এড়িয়ে চলা উচিত।

প্রাকৃতিক এসব পানীয় শরীর ও মন সতেজ রাখতে সাহায্য করে ঠিকই, তবে এসব পানের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

সূত্র: হেলথ

বয়স বাড়লে মানুষ কেন আপনজন থেকে দূরে থাকতে চায়

‘বেশি ভাবনা’ বা ওভার থিংকিং বন্ধ করবেন যেভাবে

শরীর ও মনের যত্নের ৮টি টিপস

মানসিক চাপ কমাতে নতুন ট্রেন্ড ‘অন্ধকারে গোসল’

দাম্পত্য সম্পর্কে ঘৃণার অনুপ্রবেশ হলে নতুন পথ খুঁজবেন যেভাবে

ব্রেকআপের পর ছুটি চাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে জেন-জিদের

মেডিটেশন শুরু করতে চাচ্ছেন, জেনে নিন টিপসগুলো

অন্তর্মুখী সন্তানের বাবা-মায়ের যা জানা জরুরি

‘শুধু সুখ চলে যায়, এমনই মায়ার ছলনা’

শৈশবে প্রযুক্তির ছোঁয়া মানসিক স্বাস্থ্য বদলে দিতে পারে চিরতরে