আপেল কেটে রাখলে কেন কালো হয়ে যায়? কিংবা পনিরে কেন ফুটো থাকে? খাবার নিয়ে এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরতে থাকে আমাদের মনে। এসব প্রশ্নের কোনোটার উত্তর আমরা জানি আবার কোনোটার জন্য আমরা ভাবি, এটা তো এমনই! খাবার আর পানীয়র রহস্য উদ্ঘাটনের চেয়ে মজার আর কী হতে পারে? দিনের পর দিন যে প্রশ্নগুলো আমাদের মনে ঘুরপাক খায়, তার উত্তরগুলো যখন বিজ্ঞান আর রান্নাঘরের ইতিহাস থেকে বেরিয়ে আসে, বিষয়টি আসলেই উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
চুলায় উঠলে চিংড়ি কেন গোলাপি হয়
কাঁচা অবস্থায় চিংড়ি বা ঝিনুকের রং থাকে নীলচে ধূসর। কিন্তু সেগুলো যেই না কড়াইয়ের গরম তেলে পড়ে, অমনি তারা পাল্টে ফেলে তাদের পোশাক। হয়ে যায় টুকটুকে গোলাপি। কেন জানেন? এর আসল রহস্য লুকিয়ে আছে অ্যাসটাজ্যানথিন নামক একধরনের রঞ্জক পদার্থের মধ্যে। চিংড়ির শরীরে এই রঞ্জক সব সময়ই থাকে। কিন্তু কাঁচা অবস্থায় এটি প্রোটিন অণুর সঙ্গে শক্তভাবে লেগে থাকে। তাই রংটা থাকে ঢাকা। তাপ লাগার সঙ্গে সঙ্গে প্রোটিন অণুগুলো ডি-ন্যাচার হয়ে যায়, অর্থাৎ তারা কুণ্ডলী পাকানো আকার ছেড়ে দেয়। আর যেই প্রোটিনের বাঁধন আলগা হয়, অ্যাসটাজ্যানথিন তার আসল গোলাপি রং মেলে ধরে।
পেঁয়াজ কাটলে কেন চোখ জ্বালা করে
এ যেন এক নীরব কান্না! পেঁয়াজ কাটতে গেলেই চোখে জ্বালা শুরু হয়। টপটপ করে জল পড়তে থাকে। কোনো গভীর দুঃখ নয়, এর জন্য দায়ী এক রাসায়নিক যুদ্ধ। যখন পেঁয়াজের কোষগুলো কেটে ফেলা হয়, তখন আগে আলাদা থাকা এনজাইম ও অ্যামিনো অ্যাসিড একে অপরের সংস্পর্শে আসে। এই মিশ্রণ এক রাসায়নিক বিক্রিয়ার সূত্রপাত করে। তার ফলে সিন-প্রোপ্যানেথিয়াল-এস-অক্সাইড নামক একটি রাসায়নিক তৈরি হয়। এই রাসায়নিক সহজে বাষ্পীভূত হয়ে চোখে পৌঁছায়। তখনই চোখ জ্বালা করে। আর চোখ সেই জ্বালা কমাতে জল বা অশ্রু উৎপন্ন করে। এই কান্না বন্ধ করার সহজ উপায় কী? সাঁতার কাটার চশমা বা সুইমিং গগলস পরা!
আপেল কাটলেই কেন বাদামি হয়ে যায়
আপেল কেটে যদি খোলা বাতাসে কয়েক মিনিট রেখে দেন, তবে তা বাদামি বা মরচে রঙের হয়ে যায় নিজ থেকে। এর পেছনের কারণটা হলো, বাতাসের অক্সিজেন ও ফলের ভেতরে থাকা কিছু বিশেষ এনজাইমের বিক্রিয়া। আপেলের ভেতরের শাঁসে কিছু এনজাইম থাকে। বাতাসে থাকা অক্সিজেন যখন কাটা আপেলের সংস্পর্শে আসে, তখন এই এনজাইমগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা পলিফেনল নামক প্রাকৃতিক উদ্ভিদ রাসায়নিকগুলোকে মেলানিন তৈরি করতে উৎসাহিত করে। এই মেলানিনই বাদামি বা মরচে রং তৈরি করে। তবে সব ধরনের আপেল একই গতিতে বাদামি হয় না। কারণ, তাদের মধ্যে এনজাইম ও পলিফেনলের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।
কলা অন্য ফলকে দ্রুত পাকিয়ে দেয়
ফল রাখার ঝুড়িতে যদি একটি কলা থাকে, তাহলে দেখবেন তার আশপাশে রাখা অন্য ফলগুলোও তাড়াতাড়ি পেকে যাচ্ছে। এর কারণ হলো, কলা ইথিলিন নামক একটি গ্যাস নির্গত করে। ইথিলিন একটি উদ্ভিদ হরমোন, যা ফল পাকার প্রক্রিয়া শুরু করে। কলা প্রচুর পরিমাণে এই গ্যাস ছাড়তে থাকে। এ কারণে আশপাশের অন্যান্য ফল, এমনকি কাটা ফলেরও দ্রুত পাকার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। তাই আপনি যেসব ফল দ্রুত পাকাতে চান, সেগুলোর পাশে একটি রাখুন।
হার্ড-বয়েলড ডিমের কুসুমে ধূসর রিং
ডিমের কুসুমের চারপাশে যে ধূসর রিং বা আংটি তৈরি হয়, তা সম্পূর্ণ ক্ষতিকারক নয়। এটি ডিমের কুসুমের আয়রন সাদা অংশের সালফারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে আয়রন সালফাইড তৈরির ফলে হয়। ডিম বেশি সেদ্ধ করলে বা দীর্ঘ সময় ধরে ফোটালে এর সম্ভাবনা বাড়ে। রান্না শেষে দ্রুত ঠান্ডা পানিতে রাখলে এই রং তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
সূত্র: ফুড লাভ