খাবারের দুনিয়ায় একেকটা রেসিপি আসে দীর্ঘ গবেষণা আর নিখুঁত পরীক্ষার পর। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, আমাদের চারপাশের কিছু জনপ্রিয় খাবার তৈরি হয়েছিল ভুলবশত। বলা যায়, অবহেলায় কিংবা কৌতুক করতে গিয়ে সেই খাবারগুলোর আবির্ভাব। আর কালের যাত্রায় সেই ভুলই আজ বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। যেমন চীনা কিংবদন্তি বলে, এক রাঁধুনি ভুল করে সয়াদুধে নিগারি নামের জমাট বাঁধার উপাদান মিশিয়ে ফেলেন। এর ফলেই তৈরি হয় প্রথম টোফু। রাগ, প্রতিশোধ, অবহেলা কিংবা নিছক কাকতালীয় ঘটনা থেকে জন্ম নিয়েছে পৃথিবীর কিছু জনপ্রিয় খাবার। আজ যেগুলো ছাড়া আমাদের সকাল, নাশতা কিংবা আড্ডা অসম্পূর্ণ।
হট চিকেন
১৯৩০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসিতে জন্ম নেয় এই তীব্র মসলাদার ভাজা মুরগি। গল্পটা বেশ মজার। থর্টন প্রিন্স নামের এক কুখ্যাত নারীলোভীর বান্ধবী তাঁকে শিক্ষা দিতে মুরগি ভাজায় প্রচুর মরিচ দিয়ে পরিবেশন করেছিলেন। কিন্তু প্রতিশোধের বদলে তিনি স্বাদে মুগ্ধ হন এবং তা-ই নিজের রেস্তোরাঁয় বিক্রি শুরু করেন।
নাচোজ
১৯৪৩ সালে মেক্সিকোতে এক রেস্তোরাঁয় ওয়েটার ইগনাসিও ‘নাচো’ আনিয়ে হঠাৎ রান্নাঘরে শেফকে না পেয়ে অতিথিদের জন্য টোস্টাডার ওপর চিজ আর জালাপেনো দিয়ে পরিবেশন করেছিলেন। এক অতিথি ডিশটির নাম দেন *Nacho’s especiale*। সেখান থেকেই জনপ্রিয় নাচোজের জন্ম।
চকলেট চিপ কুকিজ
টোল হাউস ইনের সহমালিক রুথ ওয়েকফিল্ড একদিন কুকিজ বানাচ্ছিলেন। সালটা ১৯৩০। হঠাৎ তিনি বুঝতে পারলেন, তাঁর বেকিং চকলেট শেষ হয়ে গেছে। তখন তিনি একটি সেমি সুইট চকলেটের বার ভেঙে টুকরা করে ব্যাটারের মধ্যে মিশিয়ে দিলেন। তিনি আসলে ভেবেছিলেন এটি গলে যাবে। কিন্তু সেই চকলেট গলল না। বরং ব্যাটারে মিশে তৈরি হলো টুকরা টুকরা চকলেটভর্তি কুকিজ। আর এই ভুলই চিরতরে দুধ ও কুকিজের জুটি বদলে দিল। সেখানে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে জুড়ে গেল চকলেট চিপ।
আইসক্রিম কোন
কোন আইসক্রিম খেতে ভালোবাসেন? জানেন, এই কোনের প্রচলন কোথা থেকে এসেছে? ১৯০৪ সালে সেন্ট লুইস বিশ্বমেলায় এক বিক্রেতার থালা ফুরিয়ে যায়। পাশের দোকানি এরনেস্ট হামউই নিজের বিক্রি করা ওয়াফেল পেস্ট্রি রোল করে দেন, যাতে আইসক্রিম রাখা যায়। সেখান থেকেই শুরু হয় ওয়াফেল কোনের গল্প।
পটেটো চিপস
জানেন কি, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই থেকেই এসেছে চিপস? আসলে যা হয়েছিল, ১৮৫৩ সালে নিউইয়র্কের এক গ্রাহক বারবার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই পাতলা করার জন্য বলছিলেন। একপর্যায়ে রাগ করে শেফ জর্জ ক্রাম আলু খুব পাতলা কেটে ভেজে দেন। মজার বিষয়, এই রাগ থেকেই জন্ম নেয় আজকের বিশ্বখ্যাত স্ন্যাকস চিপস।
কোক
জন পেম্বারটন নামের এক আহত সেনাসদস্য একটা সময় মরফিনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। এই আসক্তি দূর করতে তিনি একটি পানীয় তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ক্যাফেইনসমৃদ্ধ কোলা নাট ও সামান্য পরিমাণ কোকেন ব্যবহার করে একটি টনিক তৈরি করেন। ১৮৮৭ সালে আরেকজন আটলান্টার ফার্মাসিস্ট আসা ক্যান্ডলার পেম্বারটনের সেই মূল কোকা-কোলা ফর্মুলা মাত্র ২ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলারে কিনে নেন। ১৮৯০-এর দশকের শেষ নাগাদ কোকা-কোলা আমেরিকার অন্যতম জনপ্রিয় ফোয়ারা ড্রিংকে পরিণত হয়। তবে হ্যাঁ, ১৯০৩ সালে কোকেন উপাদানটি সরিয়ে ফেলা হয়।
কর্নফ্লেক্স
১৮৯৮ সালে মিশিগানের একটি স্যানিটোরিয়ামে কাজ করছিলেন দুই ভাই ডব্লিউ কে কেলগ ও ড. জন হার্ভি কেলগ। তাঁরা মূলত রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার বানানোর চেষ্টা করছিলেন। একদিন দুর্ঘটনাবশত গম রান্না অবস্থায় ফেলে রাখেন রান্নাঘরে। যার ফলে দানাগুলো ফ্লেক আকারে ভেঙে যায়। পরে তাঁরা এই নতুন আবিষ্কৃত খাবার নিয়ে আরও পরীক্ষা চালান। একপর্যায়ে তাঁরা একই প্রক্রিয়ায় ভুট্টার সঙ্গে ব্যবহার করে তৈরি করেন একধরনের সিরিয়াল। ফলাফল হিসেবে আজ খাবারের টেবিলে সকালে কর্নফ্লেক্সের আবির্ভাব।
সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার