প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নির্বাচিত হওয়া সুন্দরীরা বিশ্বসুন্দরীর মুকুট পরার আশায় সমবেত হন মিস ইউনিভার্সের আসরে। ১৯৫২ সালে শুরু হওয়া এ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা নান্দনিক দিক থেকে আগের চেয়ে অনেকগুণ এগিয়েছে। এ বছরের মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন ১২১টি দেশের প্রতিযোগীরা।
মিস ইউনিভার্স এর মূল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে ২১ নভেম্বর, শুক্রবার। তবে প্রাথমিক প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিযোগীরা প্রতিদিনই বিভিন্ন পোশাক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে দর্শকের হৃদয় কেড়ে নিয়েছেন। ১৯ নভেম্বর ছিল থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মিস ইউনিভার্স ২০২৫-এর ন্যাশনাল কস্টিউম রাউন্ড। এ রাউন্ডে প্রতিযোগীরা নিজেদের সৃজনশীলতা এবং নিজস্ব সংস্কৃতিকে পোশাকের মাধ্যমে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন। নেটিজেনরাও এ রাউন্ডে প্রতিযোগীদের পরা পোশাকগুলোকে দারুণভাবে উপভোগ করেছে। মিস ইউনিভার্স ২০২৫-এর ন্যাশনাল কস্টিউম রাউন্ড থেকে ৭টি দেশের ছবি রইল এখানে।
শাপলার রূপ ও স্নিগ্ধতায় বাংলাদেশ
ন্যাশনাল কস্টিউম হিসেবে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ তানজিয়া জামান মিথিলা বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ি। সাদা জামদানি শাড়িটির মোটিফ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পদ্ম মোটিফের যে সোনালি ব্লাউজ মিথিলা পরেছিলেন, সেটি ছিল জুয়েলারি ব্লাউজ। তাঁর পরিহিত গয়নার পুরো সেটটিতে ছিল টিকলি, চোকার, ঝুমকা, বালা, মোটা চূড়া, রতনচূড়, বাজু, বিছা, চাবির গোছা, আঁচলের ওপর বসানো গয়নাসহ মোট ২০ পিস গয়না। সবকিছুতেই ব্যবহৃত হয়েছে শাপলার থিম।
সাহসী ইগলের রূপে যুক্তরাষ্ট্র
মিস ইউনিভার্স ইউএসএ অড্রে একার্ট ন্যাশনাল কস্টিউম শোতে ধরা দেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পাখি ইগলের রূপে। অড্রে ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে তাঁর পোশাক নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেখান থেকে জানা যায়, ইগলের রূপে সাজতে পুরো কস্টিউমটি হাতে তৈরি করা হয়েছে। মাথা, বিশাল ডানা ও পুরো পোশাকেই ছিল আদিবাসী কারুশিল্প। কস্টিউমটিতে ব্যবহৃত প্রতিটি উপাদানই ছিল প্রাকৃতিক। দেশটির সাহস ও গর্বের প্রতিফলই তিনি ঘটাতে চেয়েছেন এই বিশ্বমঞ্চে।
সংগীতের তরঙ্গে সুইডেন
২৬ বছর বয়সী মিস সুইডেন ইউনিভার্স ড্যানিয়েলা লুন্ডকভিস্ট। তাঁর প্রাণবন্ত ও রঙিন পোশাক দিয়ে প্রিয় সুইডিশ ব্যান্ড এবিবিএকে স্মরণ করেছেন তিনি। এই ব্যান্ডের সংগীত বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। লুন্ডকভিস্টের পোশাক ছিল বিশ্বে তাঁদের সংগীত অবদানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি!
দেবত্ব ও পবিত্রতার বিকিরণে ভারত
বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন মণিকা বিশ্বকর্মা। এ রাউন্ডে তাঁর পরিহিত পোশাকটি বৌদ্ধধর্মের গভীর অধ্যাত্মবাদকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা একটি পোস্টে মণিকা তাঁর পোশাকের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এই চমৎকার পোশাকটি বোধ গয়ার বোধিবৃক্ষের নিচে রাজপুত্র সিদ্ধার্থের জ্ঞানলাভের মুহূর্তকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায়। সেটি ছিল বিশ্বজুড়ে জ্ঞান ও শান্তি বিকিরণের মুহূর্ত। এ পোশাকটি রাজকীয় সোনালি ও গেরুয়া রঙে তৈরি, যা দেবত্ব, পবিত্রতা ও জ্ঞানের চিরন্তন আলোর প্রতীক। পোশাকের কাঠামো প্রাচীন বৌদ্ধমন্দিরের স্থাপত্য থেকে নেওয়া হয়েছে। পোশাকে বোধিবৃক্ষের নকশা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, যার নিচে বুদ্ধ নির্বাণের পথ আবিষ্কার করেছিলেন।’
ভেনেজুয়েলার পোশাকে সমৃদ্ধ সমুদ্রজীবন
২৫ বছর বয়সী মিস ইউনিভার্স ভেনেজুয়েলা স্টেফানি আদ্রিয়ানা তাঁর দেশের সমৃদ্ধ সামুদ্রিক জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তাঁর ঝলমলে স্যুটটি অত্যাশ্চর্যের চেয়ে কম ছিল না। পোশাকের নিচের দিকে ভেনেজুয়েলার সামুদ্রিকজীবন পূর্ণভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল।
ফিলিপাইনের পোশাকে উৎসবের আমেজ
মিস ইউনিভার্স ফিলিপাইন আহতিসা মানালো তাঁর পোশাকের মাধ্যমে নিজ দেশের উৎসবের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এ রাউন্ডে তিনি যখন মঞ্চে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন, তখন তাঁর অঙ্গভঙ্গি ও মেজাজেও ছিল উৎসবের ছটা।
মুক্তার মোহ মায়ায় গুয়াদালুপে
ক্যারিবীয় বিশ্বের সৌন্দর্য, শক্তি ও ঐশ্বর্যের প্রতীক মুক্তা। এটি আলোকিত নারীর প্রতীক। এককথায়, শান্তি ও স্থিতিস্থাপকতার দূত এটি। এই মুক্তা পরিধান করা এই দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস বহন করে।
সূত্র: ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও ওম্যানস ওয়ার্ল্ড