দুবাইয়ের বিলাসী জীবন অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। ঠিক সেই স্বপ্নের জীবনেই ছিলেন ২৬ বছর বয়সী ব্রিটিশ নারী সৌদি আল নাদাক। ২০২০ সালে ব্যবসায়ী জামাল আল নাদাককে বিয়ে করার পর থেকে তাঁর আড়ম্বরপূর্ণ জীবনধারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে। কিন্তু সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে তাঁর বিবাহের শর্তাবলি। চমকপ্রদ সেসব শর্ত আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিয়ের আগে থেকে ছিল ‘নিয়মের তালিকা’
সৌদি জানান, তাঁদের বিয়েতে দুজনের জন্যই কিছু কঠোর নিয়ম বেঁধে দেওয়া ছিল। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, কোনো পক্ষই বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু রাখতে পারবেন না। যাতে সন্দেহ বা বিবাদ তৈরি না হয়। এ ছাড়া সৌদিকে বাধ্যতামূলকভাবে স্বামীর সঙ্গে সব ধরনের ডিভাইসের পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে হয় এবং তিনি স্বামীর সঙ্গে না থাকলে ২৪ ঘণ্টা লোকেশন ট্র্যাকিং চালু রাখতে হয়।
সৌদি বলেন, ‘আমাদের মাঝে কোনো গোপনীয়তা নেই। সব সময় লোকেশন অন থাকলে আমরা দুজনই জানি অন্যজন কোথায়, কী করছে।’
বাড়িতে রান্নাঘরে প্রবেশ নিষেধ
বিলাসী জীবনযাপনের আরেকটি অংশ হলো সৌদির কঠোর রুটিন। তিনি ঘরে রান্না করতে পারবেন না, এটিই স্বামীর শর্ত। তাঁর খাবারের ব্যবস্থা হয় রেস্টুরেন্টে বা ব্যক্তিগত শেফের মাধ্যমে। বাইরে যাওয়া থেকে শুরু করে ঘরে থাকা সব সময় তাঁকে নিখুঁতভাবে সেজে থাকতে হয়। প্রতিদিন মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইল করতে পেশাদারদের সহায়তা নিতে হয়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁকে সতর্ক থাকতে হয়, যেন স্বামী বা তাঁর পরিবারের প্রতি কোনো অসম্মানের ইঙ্গিত না থাকে।
বিলাসের বিনিময়ে
এই শর্তগুলোর বিনিময়ে সৌদি পেয়েছেন অঢেল সম্পদ ও বিলাসিতা। তাঁর সংগ্রহে আছে দামি হীরার গয়না, ডিজাইনার ব্যাগ, বিরল শিল্পকর্ম। স্বামী জামাল শুধু তাঁর স্বচ্ছন্দের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি ব্যক্তিগত দ্বীপ কিনে দেন, যাতে সৌদি সমুদ্রে সাঁতার কাটতে বা বিকিনি পরতে গিয়ে কোনো তাঁকে দেখে ফেলার শঙ্কায় না থাকেন।
গর্ভধারণের আগে আর্থিক চুক্তি
সৌদি আরও জানান, সন্তান নেওয়ার আগে স্বামীর সঙ্গে একটি বিস্তারিত আর্থিক চুক্তি হয়। তাঁর দাবি ছিল, প্রতি সন্তান জন্মের জন্য ৩ লাখ ডলার এবং যমজ হলে ৬ লাখ ডলার দিতে হবে। শুধু টাকা নয়, এই তালিকায় আরও আছে—
সৌদি বলেন, ‘সন্তান জন্মের পর আমার শরীরের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। তাই এই কষ্টের বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ পাওয়াটা ন্যায্য।’ প্রসবের পর পুরো সময় রাতের নার্স, ন্যানি এবং বিউটি টিম রাখাও স্বামীর দায়িত্ব ছিল।
সমালোচনা ও বিতর্ক
সৌদির এই স্বীকারোক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে তাঁর বিলাসী শর্ত এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা না করাকে স্বার্থপরতা ও নির্ভরশীলতার উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। সমালোচকদের দাবি, এমন সম্পর্ক নারী স্বাধীনতা ও পারস্পরিক সমতার ধারণার সঙ্গে বেমানান এবং এটি তরুণদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে পারে।
তবে আরেকটি পক্ষ সৌদির সিদ্ধান্তকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক যদি পরস্পরের সম্মতিতে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সম্পর্ক গড়ে তোলে, তবে তা নৈতিকতার মানদণ্ডে বিচার করা উচিত নয়। কেউ বিলাসিতাকে অগ্রাধিকার দিলে এবং অন্যজন তা গ্রহণ করলে সেটি তাঁদের ব্যক্তিগত সমঝোতার বিষয়।
এক স্ত্রী নীতি দাবি
দুবাইয়ের আইনে একজন পুরুষ চারজন পর্যন্ত স্ত্রী রাখতে পারেন। কিন্তু সৌদি দাবি করেন, তিনি স্বামীর একমাত্র স্ত্রী। যদিও তিনি খোলাখুলিভাবে বলেন, ‘যদি কখনো আর কেউ আসে, তবে আমার জন্য আলাদা একটি প্রাসাদ লাগবে। আমি কারও সঙ্গে ঘর শেয়ার করব না।’
সূত্র: ডেইলি মেইল