বিশ্ব হ্যালো দিবস
কিছু জিনিস যুগের পর যুগ ধরে চলে। একেবারে আবিষ্কারের সময় থেকে শুরু করে বর্তমান, সেগুলোর কোনো পরিবর্তন হয় না। তেমনই একটি বিষয় হলো, টেলিফোন কিংবা মোবাইল ফোন কানে নিয়ে প্রথমেই ‘হ্যালো’ বলা। টেলিফোনের উদ্ভাবক আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথমে টেলিফোন সম্ভাষণ হিসেবে ‘আহোয়’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা যায়। পরে সেই আহোয় শব্দই সংক্ষেপে বা উচ্চারণের সুবিধায় ‘হ্যালো’ হয়ে যায়। টমাস আলভা এডিসন ‘হ্যালো’ শব্দটিকে টেলিফোনে আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা জানানোর শব্দ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। এ শব্দটি এসেছে পুরোনো জার্মান শব্দ ‘হ্যালা, হলা’ থেকে। ফেরি নৌকার মাঝিকে ডাকার জন্য ওই শব্দ ব্যবহার করা হতো জার্মানিতে। যা হোক, হ্যালো কীভাবে এল, এটা আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু বিশ্ব হ্যালো দিবস কীভাবে ও কেন এল, সেটা কি জানি?
বিশ্ব হ্যালো দিবস পালন করা হয় ২১ নভেম্বর। শুনতে অত্যন্ত সাধারণ মনে হলেও অন্যান্য দিবসের মতো এরও একটি তাৎপর্য আছে। এ দিবসটি মানুষকে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ দিতে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ যোগাযোগের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করে। তবে এর প্রচলন কাহিনি দীর্ঘ ও মজাদার। জেনে রাখা ভালো, শুভেচ্ছা জানানোর শব্দ হিসেবে নয়; বরং মনোযোগ আকর্ষণের জন্যই প্রথম হ্যালো শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি অনুসারে, ১৮২৬ সালে ‘নরউইচ কুরিয়ার’-এ শব্দটির প্রথম লিখিত রেকর্ড পাওয়া যায়।
বিশ্ব হ্যালো দিবসের ইতিহাস
বিশ্ব হ্যালো দিবসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৩ সালে। এর উদ্দেশ্য ছিল সংঘাত-সহিংসতা নয়; বরং যোগাযোগের মাধ্যমে সবকিছু সমাধান করা যেতে পারে এবং তা-ই করা উচিত, এ কথাটি মানুষকে বোঝানো। স্পষ্ট ও সৎ যোগাযোগ শান্তির জন্ম দেয়, এমন একটা ধারণা থেকে মূলত বিশ্ব হ্যালো দিবসের প্রচলন শুরু হয়।
সত্তরের দশকে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত বেশ গুরুতর ছিল। ফলে বিশ্ববাসী আরও একটি বড় যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা করে। সে বিষয়টিকে সামনে রেখে বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের মধ্যে যোগাযোগের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য হ্যালো দিবসের প্রচলন।
১৯৭৩ সালের অক্টোবরে শেষ হওয়া ইয়ম কিপুর যুদ্ধের সরাসরি প্রতিক্রিয়া হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল এ দিবস। সেই যুদ্ধে হাজার হাজার সেনা এবং নিরীহ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছিল। কিছু সেনা হয়েছিল নির্যাতনের শিকার, আর বেশ কিছু সেনাকে দেওয়া হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড। যুদ্ধের শেষে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনাটি ছিল ২৫ বছর পর আরব-ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রথম বৈঠক। সে বৈঠকে বন্ধ হয়েছিল এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।
বিশ্ব হ্যালো দিবসের ধারণা তৈরি করেছিলেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গ্র্যাজুয়েট ব্রায়ান ম্যাককর্ম্যাক এবং হার্ভার্ডের গ্র্যাজুয়েট মাইকেল ম্যাককর্ম্যাক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত দিবসটি ১৮০টি দেশে পালিত হয়েছে। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে ৩১ জন বলেছেন, বিশ্বশান্তি বজায় রাখার উপলক্ষ হিসেবে বিশ্ব হ্যালো দিবস যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। দিবসটি বিশ্বের যেকোনো ব্যক্তি, সংস্থা কিংবা সরকারকে শান্তিপ্রক্রিয়ায় অবদান রাখার সুযোগ করে দেয়।
হ্যালো দিবস কেন গুরুত্বপূর্ণ
আপনি কি কখনো কাউকে শুভেচ্ছা জানানোর গুরুত্ব নিয়ে ভেবেছেন? কিংবা ভেবেছেন, হ্যালো না বললে আমাদের পৃথিবী কেমন হতো? যোগাযোগ হলো একটি মৌলিক মানবিক ধারণা এবং কাউকে শুভেচ্ছা জানানোর এক সুন্দর মাধ্যম। আপনি যে ভাষা বা দেশের মানুষ হোন না কেন, হ্যালো একটি পরিচিত যোগাযোগের ভাষা। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোর জন্য শান্তি একটি সংবেদনশীল বিষয়। শান্তির অনুস্মারক হলো ‘হ্যালো’। অবলীলায় বলে ফেলা ‘হ্যালো’ শব্দটি কাঁটাতারের সীমানাও ভেঙে দিতে পারে। বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রচার করতে পারে।
যোগাযোগ আর কথা বলার অভাবে দুটি মানুষের মধ্যে থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। তাই যোগাযোগ আমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর সে যোগাযোগ কিংবা কথা বলার শুরু হতে পারে একবার ‘হ্যালো’ বলার মাধ্যমে। এদিক থেকে দেখা গেলে, হ্যালো শব্দটি শান্তির ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে।
হ্যালো নিয়ে মজার তথ্য
হ্যালো শব্দটি দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর রীতি উনিশ শতকে সামাজিক সাম্যের প্রতীক হিসেবে প্রচলিত ছিল। তখন হ্যালো বলে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় না হয়ে কারও সঙ্গে কথা বলা অভদ্র ও অমার্জিত বলে মনে করা হতো। তাই, টেলিফোনে শুভেচ্ছা হিসেবে ‘হ্যালো’ শব্দটি দ্রুত সামাজিক সাম্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। একে আরও উসকে দেয় কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেনের ডিস্ট্রিক্ট টেলিফোন কোম্পানি। ১৮৭৮ সালে তারা প্রথম যে ফোন ডাইরেকটরিটি প্রকাশ করে, সেখানে ‘হ্যালো’ শব্দটির মাধ্যমে টেলিফোন ব্যবহারকারীদের আলাপ শুরু করার নির্দেশিকা লেখা ছিল।
সূত্র: ডেজ অব দ্য ইয়ার, ইকোনমিক টাইমস, ন্যাশনাল টুডে