হোম > জীবনধারা > জেনে নিন

কেএফসির বাকেটের ভেতরের গল্প

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 

আশির দশক থেকে কেএফসি তাদের খাবারের তালিকায় নতুন নতুন আইটেম যোগ করে চলেছে। ছবি: পেক্সেলস

১৯৩০ সালের দিকে কেনটাকিতে বসবাসকারী এক ব্যক্তি মনে করলেন, তিনি একটি ব্যবসা দাঁড় করাবেন। তিনি বিক্রি করবেন ভাজা মুরগি। একপর্যায়ে তিনি সফল হলেন। একপর্যায়ে তিনি ১৫০টির বেশি দেশে ৩০ হাজার আউটলেট নিয়ে এক বিশাল বৈশ্বিক সাম্রাজ্য গড়ে তুললেন। শুনতে সহজ হলেও এই অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর অধ্যবসায়, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং অবশ্যই তাঁর সেই বিখ্যাত গোপন রেসিপি। সেই ব্যক্তির নাম কর্নেল হারল্যান্ড স্যান্ডার্স। ফাস্ট ফুডের জগতের অন্যতম ব্র্যান্ড কেএফসির উদ্যোক্তা তিনি। কেএফসি কেবল একটি রেস্টুরেন্ট চেইন নয়, এটি অধ্যবসায়, উদ্ভাবন এবং একটি গোপন রেসিপির গল্প।

যেভাবে শুরু হলো চিকেন ফ্রাইয়ের যাত্রা

কেএফসির লোগোর সেই চিরচেনা মুখ হলেন কর্নেল হারল্যান্ড স্যান্ডার্স। ১৮৯০ সালে ইন্ডিয়ানার হেনরিভিলে জন্ম নেওয়া স্যান্ডার্সের জীবন শুরু হয়েছিল খুবই সাধারণভাবে। ১৩ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়ার পর তিনি স্টিমবোট পাইলট, ফায়ারম্যান, কৃষিসহ বহু ধরনের কাজ করেছেন। ১৯৩০-এর দশকে, তিনি কেনটাকির নর্থ করবিনের বাইরে একটি সার্ভিস স্টেশন নেন এবং সেখানেই শুরু করেন তাঁর ভাজা মুরগি বিক্রি। একসময় স্যান্ডার্স তাঁর সার্ভিস স্টেশনের জ্বালানি অংশটি বাদ দিয়ে সেটিকে একটি ১৪২ আসনের রোড সাইড ডিনার এবং মোটেল বানিয়ে ফেলেন। নাম দেন হারল্যান্ড স্যান্ডার্স ক্যাফে। তাঁর চিকেন ফ্রাই দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই চিকেন রান্না হতো ১১টি গোপন ভেষজ ও মসলার রেসিপিতে, প্রেশার কুকারে। স্যান্ডার্স ক্যাফে এখন ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব হিস্টরিক্যাল প্লেসেসের তালিকায় আছে। এখানে একটি জাদুঘরও রয়েছে।

হাল না ছাড়া সংগ্রাম এবং ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্ম

কেএফসির লোগোর সেই চিরচেনা মুখ হলেন কর্নেল হারল্যান্ড স্যান্ডার্স। ছবি: পেক্সেলস

ক্যাফে জনপ্রিয় হওয়ার কিছুদিন পরেই ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। তখন ৬০ বছর বয়সী স্যান্ডার্স প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েন; কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। পকেটে গোপন রেসিপি লেখা কাগজ নিয়ে ঘুরতে থাকেন দরজায় দরজায়। রেস্টুরেন্টের মালিকদের কাছে তাঁর রেসিপি দিয়ে মুরগি বিক্রি করার জন্য প্রস্তাব দিতে থাকেন। কথিত আছে, ১ হাজার ৯ বার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তিনি তাঁর প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তি পান। অবশেষে ১৯৫২ সালে উটাহর সল্ট লেক সিটিতে পিটার হারম্যানের হাত ধরে প্রথম কেনটাকি ফ্রায়েড চিকেন ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলা হয়। হারম্যান কেবল ফ্র্যাঞ্চাইজির পথই দেখাননি, তিনি জনপ্রিয় স্লোগান ‘ফিঙ্গার লিকিন গুড’-এরও জন্ম দেন। এই সময়ে স্যান্ডার্সও দেশজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির সুযোগ খুঁজতে এবং তার ব্যবসা বাড়াতে থাকেন।

আইকনিক লাল সাদা বালতি

১৯৫৭ সালে কেএফসির আইকনিক লাল ও সাদা বাকেটের প্রচলন হয়। ছবি: কেএফসি

কেএফসির মেনু প্রথম দিকে ছিল খুবই সাদামাটা। সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার পরিবেশনের ধারণা থেকে জন্ম নেয় কম্বো বক্স। সেখানে থাকত গরম ও মচমচে ভাজা মুরগি, গ্রেভি, ম্যাশড পটেটো, কোলস্লো অথবা গরম রোল ও মধু। এরপর এল সেই যুগান্তকারী উদ্ভাবন। ১৯৫৭ সালে কেএফসির আইকনিক লাল ও সাদা বালতি। এর প্রচারাভিযান শুরু হয়েছিল ব্যস্ত গৃহিণীদের লক্ষ্য করে। এখানে বলার চেষ্টা করা হয়েছিল, একটি বালতি পুরো পরিবারের জন্য যথেষ্ট এবং এটি গৃহিণীকে এক সন্ধ্যা ছুটি দেবে। ১৯৬৩ সালের মধ্যে কেএফসির জনপ্রিয়তা অভাবনীয় স্তরে পৌঁছায়। মাত্র তিন বছরে প্রায় ৪০০টি নতুন স্টোর খোলা হয়। স্যান্ডার্সের বয়স তখন ৭০-এর কোঠায়। তিনি বুঝতে পারেন, ব্যবসা তাঁর একার জন্য অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই এর এক বছর পর তিনি প্রতিষ্ঠানটি ২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেন। তবে শর্ত থাকে, তিনি আজীবন বেতনভোগী দূত হিসেবে বোর্ডে থাকবেন এবং বিজ্ঞাপনে কাজ চালিয়ে যাবেন।

১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে কেএফসি উত্তর আমেরিকার বাইরেও ব্যবসা শুরু করে। তারা প্রথম আমেরিকান ফাস্ট ফুড চেইনগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠে। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাশায়ারে তারা আত্মপ্রকাশ করে। এরপর জ্যামাইকা, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায় আউটলেট খোলে কেএফসি।

মেনুর বিবর্তন

স্যান্ডার্সের মৃত্যুর পরও কেএফসির উদ্ভাবন চলতে থাকে। ১৯৮০-এর দশকে আসে চিকেন লিটল স্যান্ডউইচ, যা আকার ও দামের কারণে জনপ্রিয় ছিল। এরপর ১৯৮৪ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে জন্ম নেয় বিখ্যাত জিংগার, যা একটি স্পাইসি চিকেন ব্রেস্ট বার্গার। এখন বিশ্বজুড়ে ১২০টির বেশি দেশে এটি পাওয়া যায়। ১৯৯১ সালে ব্র্যান্ডটি তাদের নামকে সংক্ষিপ্ত করে কেএফসি রাখে। এর কারণ হিসেবে কেউ কেউ ফ্রায়েড শব্দটি থেকে স্বাস্থ্যগত কারণে দূরত্ব তৈরি করার কথা বলেন। আবার কেউ এটিকে আধুনিকীকরণের অংশ মনে করেন।

আশির দশক থেকে কেএফসি তাদের খাবারের তালিকায় নতুন নতুন আইটেম যোগ করে চলেছে। ছবি: পেক্সেলস

’৯০-এর দশকের শুরুতে আসে হট উইংস। ১৯৯২ সালে তাদের মেনুতে নতুন সংযোজন ছিল পপকর্ন চিকেন, যা ছিল ছোট আকারের, মুচমুচে আবরণে ঢাকা চিকেন ব্রেস্টের টুকরো। স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে ১৯৯৩ সালে আসে গ্রিলড চিকেন আইটেম কর্নেল’স রোটসেরি গোল্ড। পরে সালাদ ও কম ক্যালরির অপশনও যুক্ত হয়। ২০০৫ সালে ছোট আকারের ও কম দামের কেএফসি স্নাকার ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ২০২৩ সালে কেএফসি তাদের স্থায়ী মেনুতে চিকেন নাগেটস যোগ করে, যা তৈরি হয় অরিজিনাল রেসিপি-কোটেড ব্রেস্ট মিট দিয়ে। এই নতুন নাগেটের জায়গা করে দিতে অবশ্য মেনু থেকে পপকর্ন চিকেন স্থায়ীভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়।

আজও চলছে জল্পনাকল্পনা

২০২০ সালে কেএফসি পিৎজা হাটের সঙ্গে মিলে পপকর্ন চিকেন পিৎজা লঞ্চ করে। তারা ক্রকস জুতা প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত হয়ে ফ্রায়েড চিকেন-থিমযুক্ত জুতা বাজারে আনে। আবার ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তারা প্ল্যান্ট-বেসড প্রোটিন ব্র্যান্ড বিয়ন্ড মিটের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিয়ন্ড ফ্রায়েড চিকেন রেঞ্জ চালু করে। তবে বিতর্কও পিছু ছাড়েনি।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে কেএফসি তাদের সদর দপ্তর কেনটাকি থেকে টেক্সাসের প্ল্যানোতে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এই সিদ্ধান্ত কেনটাকির বাসিন্দা ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তবে কেএফসি এখনো কেনটাকির সঙ্গে একটি চমৎকার সম্পর্ক বজায় রাখার পরিকল্পনা করেছে। এ বছরের মার্চে কেএফসি তাদের এক দশকের মধ্যে প্রথম নতুন বাকেট ‘ডাঙ্ক-ইট বাকেট’ চালু করে।

সূত্র: লাভ ফুড

বাড়ির পাইপলাইন মেরামতের টাকা বাঁচাতে চান? তাহলে দেখে নিন

প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুরুষদের যে ৭টি অভ্যাস বদলানো উচিত

আজকের রাশিফল: বহু যত্নে লালিত স্বপ্ন সত্যি হবে, সাবধানে মুখ খুলুন

আজকের রাশিফল: প্রিয়জন-বেষ্টিত থেকেও নিঃসঙ্গ লাগবে, মানুষ চেনার অধ্যায় শুরু

পাঁচ তারা হোটেলেও চুরি হয় জিনিসপত্র, জড়িত কারা

আজকের রাশিফল: সারা দিন মুড সুইং চলবে, স্বপ্নের গল্প সত্যি বলে চালাবেন না

শীতকালে লেপে মুখ ঢেকে ঘুমাচ্ছেন, বিপদ ডেকে আনছেন না তো

প্রতিদিন ওজন কমবেশি হয় যে ৫ কারণে

আজকের রাশিফল: একটু কঞ্জুস হোন, রোমান্সের জন্য দারুণ দিন হলেও রাতে ঝগড়ার সম্ভাবনা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তনের মেসেজ পেয়ে আবেগে ভেসে যাবেন, কর্মক্ষেত্রে প্রশংসিত হবেন