বিমান চলাকালে মোবাইল ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এটি কেন করতে হয় তা অনেকেরই অজানা। কেউ হয়তো নিয়ম মনে রাখেন, কেউবা ভুলে যান। তবে সত্যিই কি মোবাইল ফোন বন্ধ না রাখলে বিপদ ঘটতে পারে? পাইলট ও বিমান বিশেষজ্ঞদের মতে, সরাসরি কোনো বিপদ হয় না।
পাইলটদের অভিজ্ঞতা
৭ হাজার ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে পাইলট গ্যারি কক্সের। তাঁর মতে, ‘এতে কোনো বড় সমস্যা হবে না।’ ওয়াশিংটনের এক বিমান মেকানিকও এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে পাইলটরা বলেন, এটি শুধু নিরাপত্তার বিষয় নয়, ভদ্রতারও ব্যাপার। একজন পাইলট এবং ইউএস আর্মির ভেটেরান বলেন, ‘আপনার মোবাইল ফোন হঠাৎ নেটওয়ার্ক খুঁজতে গিয়ে পাইলটের হেডসেটের সঙ্গে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এটি অনেক সময় সমস্যার কারণ হতে পারে।’
হেডসেট পাইলটদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে উড্ডয়ন ও অবতরণের সময়, যখন খুব দূরে দেখা যায় না তখন পাইলট টাওয়ারের নির্দেশের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকে। যদি হেডসেটের শব্দ স্পষ্ট না আসে, নির্দেশ বোঝা কিছুটা কঠিন হতে পারে। তখন মশার ভোঁ ভোঁ শব্দের মতো শব্দ হয়, এটি বেশ বিরক্তিকর হলেও বিপজ্জনক নয়।
নিয়মনীতি ও ইতিহাস
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, যাত্রীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার তখনই অনুমোদন দেওয়া হয়, যখন তা বিমানের নিরাপত্তা বা যোগাযোগে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে। ১৯৯১ সালে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিমান চলাকালে সেলুলার ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল। কারণ তখন মনে করা হতো, সেলুলার সিগন্যাল গুরুত্বপূর্ণ বিমান যন্ত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। ২০১৩ সালে প্রযুক্তির উন্নতি এবং নতুন নিরাপত্তাব্যবস্থা যুক্ত হওয়ার পর ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, মোবাইল ফোন এয়ারপ্লেন মোডে থাকলে কোনো বিভ্রান্তি হয় না। একই বছরের একটি আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, ২০০৩-০৯ সালের মধ্যে মাত্র ২৯টি ঘটনার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের বিভ্রান্তির আশঙ্কা করা হয়েছিল।
ইউরোপের উদাহরণ
ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে যাত্রীদের মোবাইল ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখার প্রয়োজন হয় না। তারা চাইলে কল করতে এবং মেসেজও পাঠাতে পারে। কারণ ইউরোপে ব্যবহৃত ৫জি নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সি তুলনামূলকভাবে কম এবং এটি বিমান প্রযুক্তিকে বিভ্রান্ত করে না। এ ছাড়া, ইউরোপের এয়ারলাইনসে পিকোসেল নামে একধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, যা স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যাত্রীদের সংযোগ নিশ্চিত করে।
আমেরিকার পরিস্থিতি
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ৫জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার হয়, যা বিমানের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশের সঙ্গে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার আশঙ্কা রাখে। ফলে বিমান চলাকালে যাত্রীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার সরাসরি নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে না পারলেও, সামান্য বিভ্রান্তি পাইলটদের যোগাযোগ ও মনিটরিং প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে, ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এখনো বিমান চলাকালে মোবাইল ফোনকে এয়ারপ্লেন মোডে রাখার নিয়ম বজায় রেখেছে। এই নিয়ম অনুযায়ী, যাত্রীদের অবশ্যই ক্রু মেম্বারের নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে, সেটা ব্যাখ্যাসহ দেওয়া হোক বা না হোক।
ফলাফল ও শাস্তি
বিমান চলাচলের সময় মোবাইল ফোন এয়ারপ্লেন মোডে না রাখার জন্য যাত্রীদের জেলে পাঠানোর কোনো রেকর্ড নেই। তবে জরিমানা বা প্লেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনার রেকর্ড আছে। ২০১৬ সালে ব্রিটিশ যাত্রী ফ্লাইবের একটি ফ্লাইটে মোবাইল ফোন এয়ারপ্লেন মোড না রাখায় ৬০০ ডলারের বেশি জরিমানা গুনেছেন। ২০১৮ সালে এক যাত্রী মোবাইল ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখা নিয়ে ক্রুর সঙ্গে তর্কে জড়ান এবং শেষ পর্যন্ত প্লেন থেকে নেমে যেতে বাধ্য হন।
পরামর্শ ও সুবিধা
যাত্রীদের জন্য সহজ ও নিরাপদ হলো, মোবাইল ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখা। এতে এগুলো সেলুলার নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগের চেষ্টা করতে পারে না। এ কারণে ব্যাটারি সাশ্রয় হয়। বিমানে বসে বরং আরাম করুন, মোবাইল ফোন কিছুক্ষণের জন্য দূরে রাখুন এবং পুরো যাত্রা উপভোগ করুন।
মোবাইল ফোন এয়ারপ্লেন মোডে রাখা শুধুই নিরাপত্তার বিষয় নয়, এটি যাত্রাকে আরও আরামদায়ক করে। যাত্রীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস, যা পুরো ফ্লাইট অভিজ্ঞতাকে নিরাপদ, সহজ ও শান্তিপূর্ণ করে তোলে।
সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার