রাতে ঘুম থেকে উঠে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় আপনি হয়তো গত রাতের রেখে যাওয়া পানির গ্লাস বা বোতলের দিকে হাত বাড়ান। কিন্তু এই পানি কতক্ষণ পর্যন্ত বাইরে রাখা যায়? গতকাল রাতের জল পান করলে আপনি সম্ভবত অসুস্থ হবেন না, কিন্তু যে বোতলটি এক সপ্তাহ বা এক মাস ধরে পড়ে আছে, সেটির ক্ষেত্রে কী হবে? বাসি পানি পান করার আগে এর পেছনের বিজ্ঞানটা জেনে নেওয়া ভালো।
পানি কতক্ষণ বাইরে রাখা যায়
উত্তরটি নির্ভর করে পানি কোথায় এবং কীভাবে রাখা হয়েছিল তার ওপর। পানি যদি খোলা অবস্থায় বা দূষিত না হয়ে থাকে, তবে এটি সাধারণত এক থেকে দুই দিন পর্যন্ত পান করার জন্য নিরাপদ। তবে ১২ ঘণ্টার পর থেকে পানির মান খারাপ হতে শুরু করে। এর পর পানি বাসি স্বাদযুক্ত হতে পারে বা জায়গা ভেদে দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। এমনকি তাতে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে। যদিও এটি সরাসরি ক্ষতিকারক নয়, তবুও স্বাদের পার্থক্য আপনি অবশ্যই বুঝতে পারবেন।
পানি বাইরে থাকলে কী হয়?
পানি তার পরিবেশের সঙ্গে পরিবর্তন এবং প্রতিক্রিয়া দেখায়। বাতাসে উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল তার অক্সিজেন হারাতে শুরু করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে, যার ফলে পানির পিএইচ এবং সতেজতা পরিবর্তিত হয়। এই কারণে বাসি পানির স্বাদ অন্যরকম লাগে। এটি বিপজ্জনক না হলেও বেশ অপছন্দের হতে পারে। যদি আপনার গ্লাস বা বোতলটি খোলা থাকে বা কেউ তাতে চুমুক দিয়ে থাকে, তাহলে বিপদ বাড়তে পারে। এমনকি একটি পরিচ্ছন্ন বোতল বা পাত্রও সমস্যা তৈরি করতে পারে। আমাদের ত্বক ঘাম, ধুলো, ত্বকের কোষ এবং নাকের নিঃসরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। আমাদের লালার মধ্যে থাকে ব্যাকটেরিয়া। বোতলে মুখ দিয়ে পানি পান করলে এগুলো আবার বোতলের ভেতরের পানিতে ফিরে গিয়ে দূষণ সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লালা বা অন্য কোনো দূষণের কারণে ব্যাকটেরিয়ারা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বংশবৃদ্ধি শুরু করতে পারে। একবার বোতলে মুখ লাগালে তা এক বসাতেই পান করে ফেলা উচিত। এরপর বোতলটি ফেলে দেওয়া বা ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত।
খোলা গ্লাসে কী কী প্রবেশ করতে পারে
রাতের টেবিলে রাখা খোলা গ্লাসের পানি সকালে ফেলে দেওয়া উচিত। কারণ খোলা গ্লাস থেকে পানি পান করা সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বিকল্প নয়। রাতারাতি গ্লাসে ধুলো, বায়ুবাহিত কণা এমনকি মশা বা অন্যান্য কীটপতঙ্গ পড়ে যেতে পারে, যা জলের উপরিভাগে একটি অস্বাস্থ্যকর স্তর তৈরি করে। দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢাকা দেওয়া পাত্রে পানি সংরক্ষণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ফুটিয়ে ঠান্ডা করা পানির ক্ষেত্রে
অনেক পরিবার পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে কয়েক দিন বা এক সপ্তাহ ধরে পান করে। কেউ কেউ আবার আগের পানির সঙ্গে নতুন পানি ভরে রাখেন। বিশেষজ্ঞরা এটিকে একটি সাধারণ ভুল বলে মনে করেন। ফোটানোর ফলে পানিতে থাকা অণুজীব এবং পরজীবীগুলো তাপের কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু ফোটানো পানি বেশি দিন ধরে রাখলে তা আরও বেশি দূষিত হতে পারে। যখন পানি ফোটানো হয়, তখন অণুজীবগুলো ভেঙে জৈব পদার্থে পরিণত হয়। পরিবেশ থেকে নতুন ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে সেই জৈব পদার্থগুলো তাদের খাদ্য উৎসে পরিণত হয়। ফলে দূষণ এবং দ্রুত ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি হতে পারে। অনেকেই মনে করেন, রাতে রেখে দেওয়া ফোটানো পানির স্বাদ বদলে যায়। এটি ক্ষতিকারক না হলেও, ফোটানো পানি বেশিক্ষণ বাইরে ফেলে রাখা উচিত নয়। আদর্শগতভাবে, ফোটানো ঠান্ডা পানি দিনের মধ্যেই পান করে ফেলা ভালো এবং রাতভর ফেলে রাখা এড়িয়ে চলতে হবে।
পুনঃ ব্যবহারযোগ্য পানির বোতলের ভেতরে কী থাকে
আমাদের কলের পানি সাধারণত নিরাপদ হলেও, এতে অণুজীব থাকে। তাই আপনার বোতলে কয়েক দিন পানি রেখে দিলে ব্যাকটেরিয়া বাড়বেই। মানুষের সংক্রমণের কারণ হতে পারে এমন ব্যাকটেরিয়ারা প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খুব ভালো জন্মায়। তবে সাধারণ ঘরের তাপমাত্রাতেও তারা সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে। বোতলে পানি যত বেশি সময় ধরে ঘরের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়, তত বেশি ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। সিঙ্গাপুরে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সারা দিন ধরে ব্যবহৃত পানির বোতলের ভেতরে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা দ্রুত বাড়তে পারে। বেশির ভাগ দূষণ আসে পানি পানকারীর কাছ থেকে। আপনি যখনই বোতলে চুমুক দেন, মুখ থেকে ব্যাকটেরিয়া পানির ভেতরে প্রবেশ করে। এ ছাড়া অপরিষ্কার হাত বোতলের বাইরের অংশ থেকে জীবাণু বোতলে স্থানান্তরিত করে। নিয়মিত হাত না ধোয়া ব্যবহারকারীদের বোতলে ই. কোলাই (E. coli)-এর মতো ব্যাকটেরিয়াও থাকতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ধীর করতে প্রতিবার চুমুক দেওয়ার মাঝে বোতলটি ফ্রিজে রাখতে পারেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিয়মিত বোতল ধোয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
সূত্রঃ বিবিসি, ইভিএন এক্সপ্রেস