দীর্ঘ সময় কাজ করার ফলে শরীর ও মন দুটোই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু গবেষণা বলছে, এ থেকে মুক্তি পেতে সব সময় লম্বা ছুটির দরকার নেই। প্রতিদিনের কাজের মাঝখানে ছোট ছোট বিরতি নেওয়ার অভ্যাসই যথেষ্ট।
অল্প সময়ের বিরতির বড় প্রভাব
মাইক্রো ব্রেক বলতে বোঝানো হয় ১০ মিনিট বা তার কম সময়ের বিরতি। আগস্টের শেষে প্রকাশিত ‘পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স জার্নাল’ বা পিএলওএস ওয়ান জার্নালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা কাজের ফাঁকে এভাবে অল্প সময় বিশ্রাম নেন তাঁরা শারীরিকভাবে বেশি সতেজ ও মানসিকভাবে কম ক্লান্ত বোধ করেন।
রোমানিয়ার ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব তিমিসোয়ারার গবেষক প্যাট্রিসিয়া আলবুলেস্কু ও কোরালিয়া সুলিয়া এ বিষয়ে ২২টি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, ২ হাজার ৩৩৫ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে যাঁরা মাইক্রো ব্রেক নিয়েছেন অন্যদের তুলনায় তাঁদের শক্তি ও মনোবল প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি ছিল।
তবে সবার ক্ষেত্রে কাজের পারফরম্যান্সে এর প্রভাব সমান পড়েনি। গবেষণাগুলোর ফলাফলে দেখা গেছে, কাজের ধরন অনুযায়ী এর প্রভাব ভিন্ন।
ক্লান্তি দূর করে মাইক্রো ব্রেক
কাজের বিরতি নিয়ে গবেষণা করেন কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন ট্রুগাকোস। তিনি বলছেন, ‘অল্প সময়ের বিরতি আসলে ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।’ তাঁর ভাষায়, ‘যত বেশি ক্লান্ত হবেন, কাজ করতে তত বেশি পরিশ্রম করতে হবে। এতে আপনার এনার্জি লেভেল কমে যাবে। এর সঙ্গে কাজের মান কমবে। কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে শরীর টান টান করা, হাঁটা বা একটু চোখ বন্ধ করে রাখা, এসব অল্প সময়ের বিরতি আপনাকে নতুনভাবে শক্তি জোগায়।’
অধ্যাপক ট্রুগাকোস আরও বলেন, ‘অনেক সময় গবেষণায় দেখা না গেলেও বাস্তবে এসব ক্ষণিকের বিরতি চোখ, ঘাড় ও শরীরের আরাম দেয়। একই ভঙ্গিতে দীর্ঘ সময় বসে থাকলে শরীরে টান পড়ে, চোখে ব্যথা বা মাথাব্যথা হয়। এ সবও কমে যায় অল্প সময়ের নেওয়া বিরতিতে।’
অতিরিক্ত কাজের চাপ শুধু অফিসের ক্লান্তি বাড়ায় না, ঘুমের মানও খারাপ করে এবং ধীরে ধীরে মানসিক অবসাদ ডেকে আনে। ট্রুগাকোসের মতে, সবচেয়ে কর্মঠ কর্মীরা সাধারণত স্বল্প সময় কাজ করে মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নেন। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁরা ৫২ মিনিট কাজ করে ১৭ মিনিট বিশ্রাম নেন, তাঁদের কাজের অগ্রগতি বেশি। তাই বেশি সময় কাজ না করে, বুদ্ধিমানের মতো কাজ করলে আপনি বেশি ফল পাবেন।
কতক্ষণ কাজে কতক্ষণ বিরতি
অধ্যাপক জন ট্রুগাকোস পরামর্শ দেন, প্রায় ৯০ মিনিট কাজের পর ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বিশ্রাম নেওয়া উচিত। এর মধ্যে কয়েকটি ছোট বিরতিও থাকা দরকার। প্রতি ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর দাঁড়িয়ে স্ট্রেচ করা বা ২ মিনিটের জন্য মন অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে, সে এই বিরতির অনুষঙ্গ। তবে সবার জন্য একই নিয়ম নয়। কেউ কফি হাতে নিয়ে সহকর্মীর সঙ্গে গল্প করতে পারেন, কেউ বা একা বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে আসতে পারেন। আপনাকে যেটা মানসিকভাবে প্রশান্তি দেবে, কাজের ফাঁকে সেভাবেই আপনি বিরতি নিতে পারেন।
অফিসে ছোট বিরতি কেন দরকার
প্রতিষ্ঠানের ধারণা, কর্মীরা যত কাজ করবে তত তাদের উন্নতি হবে; কিন্তু এ ধারণাটি ভুল। কর্মীরা যতটা প্রফুল্ল মনে কাজ করবেন প্রতিষ্ঠানের জন্য ততই ভালো। কর্মীরা মানসিকভাবে সুস্থ ও চাপমুক্ত থাকলে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারবেন।
ছোট বিরতিই বড় প্রভাব ফেলে। এটি এখন শুধু গবেষণায় নয়, বাস্তব জীবনেও প্রমাণিত। মাইক্রো ব্রেক শরীর ও মন সতেজ রাখে, ক্লান্তি কমায় এবং কাজের মান বজায় রাখতে সাহায্য করে। কাজের চাপ বাড়লেও যদি আমরা মাঝেমধ্যে অল্প সময়ের জন্য বিরতি নিই, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে কর্মক্ষমতা ও সুস্থতা দুটোই ঠিক থাকবে। তাই বেশি সময় ধরে কাজ করার চেয়ে, বুদ্ধিমানের মতো বিরতি নিয়ে কাজ করাই কর্মজীবনের সঠিক কৌশল। এতে প্রতিষ্ঠানেরও অগ্রগতি হয়।
সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন