বায়ুদূষণের শীর্ষে ঢাকা, এমন খবর মাঝেমধ্যে দেখা যায় সংবাদমাধ্যমে। এই বায়ুদূষণ শরীরের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে শীতকালে। এ সময় বাতাসে ধুলার পরিমাণ বাড়ে। এতে শ্বাসকষ্ট বা হৃদ্রোগে আক্রান্তদের পাশাপাশি সুস্থ মানুষও ঝুঁকিতে পড়ে। ধুলার অতি ক্ষুদ্র কণাগুলো ফুসফুসে ঢুকে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এতে দেখা দিতে পারে নানা জটিলতা। শ্বাসনালিতে সংক্রমণ, অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি হৃদ্রোগের আশঙ্কাও বেড়ে যায় ধুলার কারণে।
দূষিত বায়ু থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায়
দূষিত বাতাসে শুধু চোখ বা গলা জ্বালাপোড়া করে না, এর প্রভাব শরীরের ভেতর পর্যন্ত পৌঁছায়। ‘জার্নাল অব টক্সিওলজি’তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাতাসে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে। এতে ফুসফুস, হৃদ্যন্ত্র ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই বায়ুদূষণের এই বাস্তবতায় সচেতন থাকা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
প্রতিদিন বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ করুন
নিজের আশপাশ সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি। এখন স্মার্টফোনে নানা অ্যাপ ব্যবহার করা যায় যেগুলো বাতাসের রিয়েল টাইমে অবস্থা দেখায়। এগুলো দেখে জানা যায় কখন বাইরে যাওয়া নিরাপদ আর কখন ঘরে থাকা ভালো। সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। তাই এ সময়ে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম না করাই ভালো।
ঘরের ভেতর নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করুন
বাইরের বাতাস যখন দূষিত, তখন ঘরই আপনার তুলনামূলক নিরাপদ আশ্রয়। প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় জানালা-দরজা বন্ধ রাখুন, যেন বাইরের দূষণ ভেতরে না ঢোকে। ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজিস্ট ও স্লিপ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অনিমেষ আর্য বলেন, ‘ভালো মানের যেকোনো এয়ার পিউরিফায়ার ঘরের ধূলিকণা ও দূষণ অনেক কমিয়ে দেয়, শ্বাস নিতে আরাম দেয়।’ এ ছাড়া ঘরে স্নেক প্ল্যান্ট বা আরেকাপামগাছ রাখলে তা প্রাকৃতিকভাবেই বাতাস বিশুদ্ধ করে।
বাইরে গেলে সঠিক মাস্ক ব্যবহার করুন
বাতাসে ক্ষতিকর কণা থেকে বাঁচতে ভালো মানের মাস্ক পরা জরুরি। এন৯৫ বা এন৯৯ সার্টিফায়েড মাস্ক ক্ষুদ্র কণাগুলো ছাঁকার ক্ষমতা রাখে। কাপড়ের মাস্ক বা সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক দূষণের সূক্ষ্ম কণাগুলো ঠেকাতে পারে না। তাই নির্ভরযোগ্য মাস্ক ব্যবহার করুন। এটি আপনার ফুসফুসের সুরক্ষায় বেশ কাজে দেবে।
পর্যাপ্ত পানি পান এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন
দূষিত বাতাসের প্রভাব থেকে শরীর রক্ষা করতে হলে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি থাকলে তা বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। পাশাপাশি অ্যান্টি অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার; যেমন আমলকী, লেবুজাতীয় ফল, পালংশাক, আখরোট ইত্যাদি নিয়মিত খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। ডা. আর্য বলেন, ভিটামিন সি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার শরীরের ভেতরে দূষণের ক্ষতি কমাতে সহায়তা করে।
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের বাড়তি যত্ন নিন
দূষণের প্রভাব বেশি পড়ে শিশু, প্রবীণ ও শ্বাসযন্ত্রের রোগীদের ওপর। ডা. আর্য পরামর্শ দেন, যেদিন বাতাসের অবস্থা বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছায়, সেদিন অসুস্থ ব্যক্তিদের বাইরে যাওয়া একেবারেই উচিত নয়। তাঁদের ইনহেলার, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সব সময় কাছে রাখুন এবং নিয়মিত ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম অনুশীলন করুন
ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে শুধু দূষণ এড়ানোই যথেষ্ট নয়, সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাসও জরুরি। ঘরের ভেতরে শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করতে পারেন। এতে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে এবং অক্সিজেন গ্রহণের হার উন্নত হয়। দূষিত বাতাসে ভারী ব্যায়াম বা দৌড়ানো এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
বায়ুদূষণ দীর্ঘ মেয়াদে শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তাই সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি; বিশেষ করে যাদের হৃদ্রোগ বা ফুসফুসের সমস্যা আছে, তাদের নিয়মিত রক্তচাপ ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করানো উচিত। আগেভাগে সমস্যা শনাক্ত করলে চিকিৎসা সহজ হয় এবং জটিলতা এড়ানো যায়।
বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যের ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি এক দিনে বন্ধ হবে না, তবে সচেতনতা ও দৈনন্দিন ছোট ছোট অভ্যাস আমাদের সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র: হেলথশট