অতিথি পাখির অভয়ারণ্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সবুজে আচ্ছাদিত এই ক্যাম্পাসে রাস্তার ধারে কিংবা গাছের মগডালে দেখা মেলে কিছু কাঠের বাক্সের। প্রথম দেখায় মনে কিছুটা ধন্দ তৈরি হতে পারে। কিন্তু খেয়াল করলে বোঝা যায় এগুলো পাখিদের জন্য তৈরি করা কৃত্রিম বাসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন শিক্ষক তাঁর গবেষণাকাজের জন্য এগুলো তৈরি করেছেন।
উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় অঞ্চলে কৃত্রিম বাসায় পাখির পরজীবিতা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সাজেদা বেগম জানিয়েছেন, পিএইচডি-পরবর্তী পরীক্ষামূলক গবেষণাকাজের জন্য ক্যাম্পাসে ২০ থেকে ৩০টি আর্টিফিশিয়াল নেস্ট বা পাখির কৃত্রিম বাসা বিভিন্ন রাস্তার পাশের গাছে লাগানো হয়েছে। মূলত ‘পাখির পরজীবিতা’বিষয়ক গবেষণার
জন্য ২০২২ সালের শুরু থেকে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।
১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগরের লেকে প্রথমবারের মতো দেখা মিলেছিল অতিথি পাখির। এরপর থেকে প্রতিবছর শীত মৌসুমে ক্যাম্পাসে আসে পাখিরা। প্রথম দিকে সন্ধান মিলেছিল প্রায় ৯০ প্রজাতির পাখির। এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২০০-তে গিয়ে ঠেকেছে। এর মধ্যে ১২৬ প্রজাতির দেশীয় ও ৬৯ প্রজাতির অতিথি পাখি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আবার বেশ কিছু প্রজাতির পাখি ক্যাম্পাসে সব সময়ই দেখা যায়। এভাবে সবুজের এই নগর গড়ে উঠেছে পাখির এক অকৃত্রিম অভয়ারণ্য।
অধ্যাপক সাজেদা বেগম জানান, বাংলাদেশে কোকিল পাখির পরজীবিতা নিয়ে এর আগে গবেষণা হয়নি। তিনিই প্রথমে সেটি শুরু করেছেন। বাংলাদেশে সাধারণত ১৫ প্রজাতির কোকিল আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ প্রজাতির কোকিল নিয়মিত দেখা যায়। কোকিল মূলত কাক, শালিক ও কসাই পাখির বাসা ব্যবহার করে ডিম দেয় এবং বাচ্চা ফোটায়। এই গবেষণায় আর্টিফিশিয়াল নেস্টে কোকিলের ডিম ফোটানোর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গবেষণা শেষে প্রয়োজন অনুসারে আর্টিফিশিয়াল নেস্টগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, গাছপালা নির্বিচারে নিধনের ফলে এ দেশের আবাসিক পাখিদের বসবাস ও প্রজননের জন্য যে আবাস প্রয়োজন তা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। অথচ প্রকৃতি ও পরিবেশের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে বিচিত্র প্রজাতির পাখি।