‘চুড়ির তালে নুড়ির মালা রিনিঝিনি বাজে লো,/ খোঁপায় দোলে বনফুলের কুঁড়ি…’ কথায় আছে ‘হাত ভরা চুড়ি, খোঁপায় বনফুলের কুঁড়ি, পরনে বর্ষা নীল শাড়ি তবেই বঙ্গ নারী।’
আসছে বর্ষার দিন। প্রকৃতির সাজে তাই নীল নীল রং। বৃষ্টির ছন্দে, আনন্দে বাজবে চুড়ির রিনিঝিনি সুর। হ্যাঁ, বলছি নারীর হাতের চুড়ির কথা। বৃষ্টি আর চুড়ির সুর তাল লয় যেন একই ছন্দে বয়ে যায় বর্ষার দিনে। নারীর সাজসজ্জায় চুড়ির আবেদন চিরন্তন। চুড়ি না হলে অভিমানভরে বধূ গেয়ে ওঠে, ‘কিনে দে রেশমি চুড়ি, নইলে যাব বাপের বাড়ি…।’ নারীর চুড়িপ্রীতি এতটাই গভীর যে না পেলে বউয়ের মনে বরের ঘর ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার ভাবনাও খেলে যায়।
একসময় কাচের চুড়ির জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ রঙের ডজন কয়েক কাচের রেশমি চুড়ি সাজের বাক্সে থাকতই থাকত। কিন্তু এখন বদলেছে সময়। কাচের চুড়ির পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে কাঠ, কাপড়, কড়ি, পুঁতি, মেটাল আরও কত-কী!
কাপড় কড়ির চুড়ি বানানো ‘তাসা’র স্বত্বাধিকারী সঙ্গীতা ওয়াহিদ তাসা বলেন, ‘বর্ষা মানেই চারপাশে বিরাজ করে অপরূপ সুন্দর পরিবেশ। প্রকৃতির মতো বাঙালি নারীর মনও নেচে ওঠে বৃষ্টির গানে ও ছন্দে। প্রকৃতির মতো সাজ সাজ মনোভাব ছোট্ট মেয়ে থেকে তরুণী কিংবা বয়স্ক সবারই—ইচ্ছে হয় ময়ূরের মতো নীল সাজে সেজে ওঠার। আর তখন হাতভরা রংবেরঙের চুড়ি তার চাই-ই চাই।’ তাসা নিজেও ভালোবাসেন চুড়ি। সেই ভালোবাসা থেকেই তাঁর নিত্যনতুন চুড়ির নকশা করা। তাসা চুড়িতে জুড়ে দেন নান্দনিক সব উপাদান। যেমন কড়ি, কাপড়, নানা রকম সুতো, ঘুঙুর, পুঁতি, রুদ্রাক্ষ। এই সবকিছু মিলে তাসার চুড়ির নকশায় যোগ হয় ভিন্নমাত্রা। সঙ্গীতা ওয়াহিদ তাসা বলেন, ‘ইন্দো বোহিমিয়ান স্টাইলের এই চুড়িগুলো মানিয়ে যাবে শাড়ি, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ, টপসসহ যেকোনো পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাকের সঙ্গেও।’
বর্তমান সময়ে কাঠের চুড়ি মন কেড়েছে তরুণীদের। কখনো এক ইঞ্চিমতো চওড়া, কখনোবা নেহাতই সরু কাঠের চুড়িতে লাল, নীল রঙের জাদুতে ফুটে ওঠা ভ্যানগঘ, যামিনী রায়, ফুল-লতাপাতা, পাখি। শাড়ি কিংবা টপসের সঙ্গে হাতজুড়ে পরে বেরিয়ে পড়ছেন কাজে কিংবা নিছকই ঘুরতে।
ব্যবহারের এই সুবিধাই শুধু নয়, এসব চুড়িতে রয়েছে বাড়তি সৌন্দর্য। কোনোটায় আছে অনেক ঝুনঝুনির কাজ, আবার কোনোটায় কুন্দন কিংবা মিনার কাজ। বর্ষার সাজে এই সব চুড়ি বেছে নেওয়ার সময় নীল কিংবা সিলভার রং ভালো দেখাবে। দেশীয় পোশাকের সঙ্গে এক হাতে একটি মোটা বালা পরলে বা দুই হাতে চিকন কয়েকটি চুড়ি পরে মাঝখানে একটু মোটা কোনো বালা পরলেও ভালো লাগবে। এ ছাড়া চুমকি বসানো বা জমকালো নকশার চুড়িগুলোর সঙ্গে মাঝে পাথর বসানো মোটা চুড়িও কয়েকটা পরা যাবে টপস, কুর্তি, স্কার্ট অথবা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে।
ঢাকার প্রায় সব মার্কেট ও শপিং মলে কাচের চুড়ি পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এবং ঢাকার বেইলি রোডের ফুটপাতেও সাধারণত চুড়ি বিক্রেতারা তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেন। বিভিন্ন উৎসব সামনে রেখে কিছু ফ্যাশন হাউসও ক্রেতাদের জন্য কাচের চুড়ির সংগ্রহ নিয়ে আসে। ফ্যাশন হাউস বিশ্বরঙ, মাদুলি, প্রবর্তনা, মাদলেও কাচের চুড়ির সংগ্রহ রয়েছে। কাচ বাদে অন্যান্য অনুষঙ্গ দিয়ে বানানো চুড়ি পাওয়া যাবে বেশ কিছু ফ্যাশন হাউসে। এ ছাড়া তাসা, শৈলী কিংবা এলসেহোয়েরের মতো ফেসবুককেন্দ্রিক পেজে খোঁজ করলেও মিলবে বিভিন্ন উপকরণের তৈরি চুড়ি।
দরদাম
বিভিন্ন রকম কাচের চুড়ির দাম সাধারণত ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। নকশাভেদে দামে তারতম্য আসতে পারে। একদম সাধারণ কাচের চুড়ি বা রেশমি চুড়ির দাম সাধারণত প্রতি ডজন ৪৫ থেকে ৬০ টাকা হয়। আর বহুরঙা এবং রাজস্থানি বা কাশ্মীরি নকশার চুড়ি প্রতি ডজনের দাম পড়বে ১০০ থেকে ২০০ টাকা।