ঢাকা থকে রাত সাড়ে ১১টার বাসে চড়ে ভোর প্রায় ৬টায় খাগড়াছড়ি নামি। হোটেলে ব্যাগ রেখে বের হয়ে যাই পানছড়ি রোডের প্যারাছড়ার পথে। সেখানে আগেই হাজির ছিলেন গাইড জগৎ জ্যোতি ত্রিপুরা। অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে জগতের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিই। এবার যাওয়ার পালা মূল গন্তব্য মায়ুং কপাল। পুরোটা পথ হেঁটেই যেতে হবে। আসা–যাওয়া প্রায় ৫ ঘণ্টার হাইকিং-ট্র্যাকিং। কিছু দূর যাওয়ার পরই চেঙ্গী নদী। ছোট্ট খেয়ায় পারাপার। নদীর প্রস্থ তেমন না হলেও গভীরতা ছিল বেশ। চেঙ্গীর মাঝামাঝি গিয়ে দেহ অনুভব করে মৃদু বাতাসের শিহরণ। নদীর দুকূলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও বেশ নজর কাড়ে। পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলো এমনিতেই অন্য সব নদীর চেয়ে সৌন্দর্যে-স্বকীয়তায় অন্যরকম।
চেঙ্গী নদী পার হয়ে চ্যালাছড়া পাহাড়ি গ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে থাকি। যেতে যেতে চোখে পড়ে লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দির। আরও কিছুটা দূর এগোনোর পর শুরু হয় বুনো পথ। এখন শুধু ওপর দিকেই উঠছি। মাথার ওপর আকাশ ছোঁয়া গাছের ছায়া। অচেনা পাখপাখালির সুর মাতিয়ে রেখেছে চারপাশ। নাকে এসে লাগছে বুনো ফুলের ঘ্রাণ। সুনসান নীরবতাকে সঙ্গী করে যেতে যেতে শঙ্খমোহন পাড়ায় বট গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নিই। এখানে ত্রিপুরাদের পাড়াটা ছবির মতো সুন্দর। বেশির ভাগ ঘর মাটি ও শণের তৈরি।
গাইডের তথ্যমতে, ৩১৫টি সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছে যাই মায়ুং কপাল পাহাড়ের ওপরে। এ যেন আরেক জগৎ। পাহাড়ে দাঁড়িয়ে পাহাড় দেখা। বৃষ্টির কারণে পাহাড়গুলো গাঢ় সবুজে মোড়ানো। গাছের পাতা ছিল বৃষ্টি ভেজা চকচকে সবুজ। দুচোখ যত দূর যায়, শুধু পাহাড় আর পাহাড়। আমরা আরও সামনের দিকে এগোতে চাই। কিন্তু গাইডের সবুজ সংকেত না থাকায় সিঁড়ির কাছাকাছিই থাকি। ওখান থেকেই নয়ন ভরে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করি।
যে কারণে অনেকেই স্বর্গের সিঁড়ি নামেও ডেকে থাকেন একে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় মাঝামাঝি অবস্থানে বাতাস আছড়ে পড়ে যেভাবে শরীর শীতল করে তোলে, সিঁড়ির নিচে বা ওপরে সেরকমটা পাওয়া যায় না। মায়ুং কপাল পাহাড়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় কাটিয়ে, দীপা ত্রিপুরার বাগানের পাহাড়ি আম রাঙগুই’র স্বাদ নিয়ে ফিরতি পথ ধরি।
সতর্কতা: মায়ুং কপাল ভ্রমণের জন্য পেশাদার গাইড নেই। সুতরাং স্থানীয় যাকে গাইড হিসেবে নেবেন, তাঁকে বুঝেশুনে নিতে হবে। পর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও পরিমাণ অনুযায়ী শুকনো খাবার সঙ্গে নিতে হবে। গাইডের পরামর্শ ছাড়া কোনো পাড়া বা পাহাড়ের পথে যাবেন না।