প্রতিটি শিশু একটি স্বতন্ত্র সত্তা; যার রয়েছে বেঁচে থাকা, নিরাপত্তা, শিক্ষা, ভালোবাসা ও মর্যাদার অধিকার। আধুনিক বিশ্ব শিশু অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার করেছে মাত্র কয়েক দশক আগে, কিন্তু ইসলাম প্রায় চৌদ্দ শ বছর আগেই শিশুর নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও কল্যাণ নিয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে শিশুর প্রতি দায়িত্ব পালন শুধু সামাজিক কর্তব্য নয়, এটি আল্লাহর নির্দেশ মানার অংশ, এক প্রকার ইবাদত।
শিশু: আল্লাহর বিশেষ আমানত
ইসলাম সন্তানকে আল্লাহর দেওয়া একটি নৈসর্গিক উপহার ও পবিত্র আমানত হিসেবে ঘোষণা করেছে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—‘সম্পদ ও সন্তান দুনিয়ার শোভা।’ (সুরা কাহাফ: ৪৬)। এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—শিশু শুধু পারিবারিক সুখের উৎস নয়, বরং সমাজের সৌন্দর্য ও ভবিষ্যতের ভিত্তি। তাই তাকে লালন-পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব।
শিশুর প্রতি ভালোবাসা ইমানের প্রকাশ
রাসুলুল্লাহ (সা.) শিশুদের প্রতি অগাধ মমতা ও স্নেহ দেখাতেন। তিনি বলেন, ‘যে ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং বড়দের সম্মান করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (জামে তিরমিজি: ১৯৮১)
শিশুর প্রতি ভালোবাসা, কোলে নেওয়া, আদর করা—এসব নবীর সুন্নত। এক ব্যক্তি যখন বললেন যে তিনি কখনো সন্তানকে চুমু খান না, তখন নবী (সা.) বলেছিলেন, ‘আল্লাহ তোমার অন্তর থেকে দয়া তুলে নিয়েছেন, আমি কী করতে পারি?’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৯১৮, সহিহ্ মুসলিম: ২৩৩৭)। এ থেকেই বোঝা যায়, দয়া-মমতা শুধু আবেগ নয়, এটি একজন মুমিনের চরিত্র।
শিশুর জীবন রক্ষা: ইসলামের কঠোর নির্দেশ
জাহেলিয়াতের যুগে কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়ার ভয়ংকর প্রথা ইসলামের আগমনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়। আল্লাহ বলেন, ‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না; তাদের রিজিক আমিই দিই, তোমাদেরও দিই।’ (সুরা ইসরা: ৩১)
এই আয়াত শিশুর জীবনের অমূল্য মর্যাদা ঘোষণা করে—দারিদ্র্য, ভয় বা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে তার জীবন হরণ বা অবহেলা কোনোটিই বৈধ নয়।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি