হোম > ইসলাম

আপনার জিজ্ঞাসা

ক্র্যাক সফটওয়্যার ব্যবহার কি জায়েজ, ইসলাম কী বলে

মুফতি শাব্বির আহমদ

প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম। আমি কম্পিউটার বিজ্ঞানের একজন শিক্ষার্থী। প্রায়ই আমাদের এমন সব সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়, যা কিনতে অনেক টাকা লাগে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ক্র্যাক বা পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করি। এমন অবস্থায় আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, ক্র্যাক সফটওয়্যার ব্যবহার করা কি জায়েজ? এটি ব্যবহার করে অর্জিত আয় কি হালাল হবে? এই বিষয়ে ইসলামের বিধান কী, তা জানতে চাই।

সজল আহমেদ, সিলেট

উত্তর: ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনার প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আধুনিক প্রেক্ষাপটে এর একটি স্পষ্ট সমাধান থাকা জরুরি। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ইসলামে হালাল উপার্জনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এই বিষয়ে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিছু নতুন বিষয় সামনে এসেছে, যেমন সফটওয়্যার, বই বা অন্যান্য উদ্ভাবনের মেধাস্বত্ব। এই মেধাস্বত্বকে শরিয়তের দৃষ্টিতে সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা যায় কি না, তা নিয়ে ইসলামি ফিকহবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

মেধাস্বত্ব ও শরিয়তের দৃষ্টিতে তার মর্যাদা

মেধাস্বত্বকে সম্পত্তি (মাল) হিসেবে গণ্য করা হবে কি না, সে বিষয়ে আলেমদের দুটি প্রধান মত রয়েছে:

  • প্রথম মত: একদল আলেমের মতে, মেধাস্বত্ব কোনো বস্তুগত বা স্পর্শযোগ্য জিনিস নয়, তাই এটি প্রচলিত সম্পত্তি নয়। তাঁদের যুক্তি হলো, যেহেতু এটি কোনো শারীরিক বস্তু নয়, তাই লেখক বা উদ্ভাবকের অনুমতি ছাড়া এর নকল করা বৈধ।
  • দ্বিতীয় মত: অন্য দলের আলেমগণ মনে করেন, আধুনিক যুগে মেধাস্বত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অধিকার এবং এটিও এক প্রকার সম্পত্তি। এই মত অনুযায়ী, লেখক বা উদ্ভাবকের অনুমতি ছাড়া এর নকল কপি তৈরি করা, কেনা বা ব্যবহার করা অবৈধ।

প্রমাণ ও যুক্তির বিচারে, এই দ্বিতীয় মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। কারণ, এই মতটি লেখকের পরিশ্রম, মেধা এবং অধিকারকে সম্মান জানায়, যা ইসলামের মূলনীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।

নকল সফটওয়্যার ব্যবহারের বিধান

অধিক গ্রহণযোগ্য দ্বিতীয় মতামতের ভিত্তিতে দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া অনুযায়ী, নকল বা পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট বিধান প্রযোজ্য:

১. নকল সফটওয়্যার কেনা ও ব্যবহার: নকল সফটওয়্যার কেনা এবং ব্যবহার করা মাকরুহ (অপছন্দনীয়) ও সতর্কতার পরিপন্থী। এর কারণ দুটি: ক. এটি মেধাস্বত্বের অধিকার লঙ্ঘন করে। খ. এটি দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ এবং একজন মুসলমানের জন্য আইন মেনে চলাও শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।

২. নকল সফটওয়্যার ব্যবহার করে উপার্জন: যদি কেউ নকল সফটওয়্যার ব্যবহার করে কোনো আয় করে, তাহলে তার সেই আয় হারাম হবে না, বরং তা হালাল হিসেবে গণ্য হবে। তবে যেহেতু এটি আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ, তাই এই কাজ থেকে বিরত থাকা এবং সতর্ক থাকা আবশ্যক।

৩. শিক্ষা বা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য: শিক্ষার উদ্দেশ্যেই হোক বা অন্য কোনো প্রয়োজনেই হোক, সবকিছুর জন্য একই বিধান প্রযোজ্য। শরিয়ত কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যকে নকল সফটওয়্যার ব্যবহারের ছাড় দেয় না। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতেই বৈধ সফটওয়্যার ব্যবহারে সচেষ্ট হওয়া উচিত।

ইসলামে হালাল উপার্জনের পাশাপাশি মানুষের অধিকার এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নকল সফটওয়্যার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা একদিকে যেমন মেধাস্বত্বের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, অন্যদিকে তা আইন মেনে চলারও একটি দৃষ্টান্ত।

অতএব, একজন মুমিনের কর্তব্য হলো বৈধ সফটওয়্যার ব্যবহারের চেষ্টা করা এবং যেকোনো ধরনের সন্দেহজনক কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

উত্তর দিয়েছেন, মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

মৃত ব্যক্তিকে দেখে যে দোয়া পড়তে হয়

মৃত ব্যক্তির জন্য যেভাবে দোয়া করবেন

জুমার দিনে আত্মশুদ্ধির ১০ নির্দেশনা

আজ মক্কা-মদিনায় জুমা পড়াবেন যাঁরা

আরবি মুমিনের জীবনের ব্যবহারিক ভাষা

শিলালিপি থেকে কোরআনের হরফ

আল্লামা জুলফিকার আহমদ নকশবন্দি: কালোত্তীর্ণ আধ্যাত্মিক সাধক

বাংলাদেশে আরবি ভাষা চর্চা ও ক্রমবিকাশ

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫