শীতকাল আমাদের জীবনে শুধু ঋতুর পরিবর্তন নিয়ে আসে না, বরং এটি আমাদের মানবিকতা, সহমর্মিতা ও ইবাদতের এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। ষড়্ঋতুর দেশ হলেও বাংলাদেশে এখন শীত ও গ্রীষ্ম—এই দুটি ঋতুই প্রকটভাবে অনুভূত হয়। পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ তাআলা শীত ও গ্রীষ্মের সফরের কথা উল্লেখ করেছেন।
গরিবের জন্য শীত এক নীরব দুর্ভোগ
শীত আমাদের অনেকের কাছে আনন্দের বার্তা নিয়ে এলেও দরিদ্র, ছিন্নমূল ও বস্ত্রহীন মানুষের জন্য এটি এক ভয়াবহ দুর্ভোগ। শৈত্যপ্রবাহ ও তীব্র হিমেল বাতাসে বৃদ্ধ, শিশু ও দরিদ্র মানুষের কষ্ট অসহনীয় হয়ে ওঠে। তাদের নেই গরম পোশাক, কম্বল বা ন্যূনতম আশ্রয়। রাস্তায় খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহানোই তাদের একমাত্র উপায়। শীতের তীব্রতায় নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি এবং কোল্ড ডায়রিয়ার মতো শীতজনিত রোগ বেড়ে যায়, আর চিকিৎসা এবং ওষুধ তাদের নাগালের বাইরে থাকে। এই অবস্থায় সামর্থ্যবানদের দায়িত্ব হলো তাদের পাশে দাঁড়ানো।
অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সর্বোত্তম ইবাদত
ইসলাম হলো দয়া, সহানুভূতি ও মানবিকতার ধর্ম। শীতার্ত, ক্ষুধার্ত বা দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত মুত্তাকিদের পরিচয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘...প্রকৃত সৎ কর্ম হলো আল্লাহর প্রেমে আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, অভাবীদের জন্য ব্যয় করা।’ (সুরা বাকারা: ১৭৭)
নবী করিম (সা.) মানবসেবা ও দানের গুরুত্ব অনুধাবন করানোর জন্য অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করেছেন, যার মাধ্যমে বস্ত্রদান, খাদ্যদানের ফজিলত বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে পোশাক পরাবেন।’ (সুনান আবু দাউদ: ১৬৭২)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন।’ (সুনান আবু দাউদ: ২৭৯৪)
শীত মোকাবিলায় সমাজের দায়িত্ব
শীতের দুর্ভোগ শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং এটি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতাও। সরকার, সমাজ, সংগঠন এবং গণমাধ্যম—সকলকে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগী হতে হবে। শীতবস্ত্র বিতরণ, চিকিৎসাসেবা, ওষুধ দেওয়া এবং ফুটপাতবাসীর জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা এখন জরুরি। সমাজের সকল সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা ও সাহায্য করা ইমানের অপরিহার্য অংশ। নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইকে সাহায্য করে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৬৯৯)
তবে দানের উদ্দেশ্য যেন কখনোই প্রচার-প্রদর্শন না হয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করতে হবে। সামান্য একটি কম্বলও কোনো শিশুর প্রাণ বাঁচাতে পারে বা কোনো বৃদ্ধের রাতের ঘুম ফিরিয়ে দিতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সামর্থ্য অনুযায়ী শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি