শিরক শব্দের অর্থ অংশীদারত্ব। যেকোনো বস্তুর মালিকানায় অংশীদারত্ব যে কারও কাছে অপছন্দনীয়। বিশেষ করে বস্তুটা যদি একান্তই কারও একচ্ছত্র কর্তৃত্বাধীন হয়, তাহলে তো তাতে কাউকে হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগই দেয় না।
এই বিশ্বমণ্ডলের একচ্ছত্র মালিকানা মহান আল্লাহ তাআলার; অন্য কারও নয়। পবিত্র কোরআনে অনেক জায়গায় আল্লাহ নিজের ও মুশরিকদের মাবুদের মধ্যে তুলনা করে বলেছেন, তিনিই একমাত্র মাবুদ আর অন্যান্য যা কিছু তারা শরিক করে, সবই তার গোলাম।
পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শিরক করলে তা ক্ষমা করেন না, আর এটা ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক স্থির করল সে গুরুতর গুনাহ করল।’ (সুরা নিসা: ৪৮)
এই আয়াত দ্বারা বোঝা গেল, শিরক অমার্জনীয় অপরাধ। যেকোনো গুনাহ বা অপরাধ আল্লাহ ইচ্ছা করলে মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু শিরক এমন এক অপরাধ, যা আল্লাহ কস্মিনকালেও মাফ করবেন না। শিরককারী তথা মুশরিকের জন্য জান্নাত হারাম এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম।
ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থির করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান জাহান্নাম’। (সুরা মায়েদা: ৭২)
আল্লাহর সঙ্গে শিরক না করার ব্যাপারে লোকমান হাকিম স্বীয় পুত্রকে উপদেশদানের কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী, স্মরণ করুন ওই সময়ের কথা) যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলল—হে বৎস আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা মারাত্মক জুলুম।’ (সুরা লোকমান: ১৩)
সমস্ত জগতের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ। সুতরাং একমাত্র আল্লাহর জন্যই ইবাদত বা উপাসনা হবে, অন্য কারও জন্য নয়। পবিত্র কোরআনের সতর্কবার্তা—‘আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্য স্থির করো না। তাহলে নিন্দিত ও (আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে) বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩৯)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শিরক করা ছাড়া আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে (মৃত্যুবরণ করবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শিরক করা অবস্থায় (মৃত্যুবরণ করবে), সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৯৩)
লেখক: মুফতি মাসউদুর রহমান জামালী, মুদাররিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।