পারস্পরিক সহযোগিতা ও উপকার একটি মহৎগুণ। মানুষ হিসেবে একে অপরের প্রয়োজনে এগিয়ে আসা মানবতার বহিঃপ্রকাশ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেকেই উপকার করার পর সেই উপকারের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে কিংবা খোঁটা দিয়ে উপকারের প্রতিদান নষ্ট করে ফেলেন। ইসলামের দৃষ্টিতে এমন আচরণ শুধু নিন্দনীয় নয়, গুরুতর পাপও বটে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের দান-সদকা নষ্ট করো না খোঁটা ও কষ্টদানের মাধ্যমে।’ (সুরা বাকারা: ২৬৪)
দান বা উপকার তখনই গ্রহণযোগ্য হয়, যখন সেটি বিনয়ের সঙ্গে নিঃস্বার্থভাবে করা হয়। কেউ যদি পরে সেই উপকারের কথা বলে খোঁটা দেয়, তাহলে তার সওয়াব সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়।
উপকারের পর খোঁটা দিলে মানুষ কৃতজ্ঞতার বদলে লজ্জা ও অপমানবোধে কষ্ট পায়। এতে বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক সৌহার্দ্য নষ্ট হয়। কেউ আর উপকার গ্রহণে আগ্রহী থাকে না, কারণ তার মনে আশঙ্কা থাকে—পরে হয়তো এই উপকার গ্রহণই তার অপমানের কারণ হবে। ফলে মানুষের পারস্পরিক সহানুভূতি হারিয়ে জন্ম নেয় আত্মকেন্দ্রিক ও অবিশ্বাসের পরিবেশ।
দান বা উপকারের পর খোঁটা দেওয়া আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। দান করা যত বড় সওয়াবের কাজ, খোঁটা দেওয়া তত বড় গুনাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের পবিত্রও করবেন না; তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা?’ তিনি বললেন, ‘একজন হলো যে দান করার পর খোঁটা দেয়।’ (সহিহ্ মুসলিম: ১০৬)
আমরা যদি সত্যিই আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করি, তবে আমাদের উচিত—উপকার করার পর খোঁটা না দিয়ে সহমর্মিতা জারি রাখা। কারণ মানুষকে সম্মান দেওয়াই প্রকৃত মানবতা। উপকারের পর খোঁটা দিলে মানুষের আমল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সম্পর্কেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।