বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির আমীরুল মুজাহিদীন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাইর উদ্বোধনী বয়ানের মধ্য দিয়ে চরমোনাইর তিনদিন ব্যাপী অগ্রহায়ণের মাহফিল শুরু হয়েছে।
২৬ নভেম্বর (বুধবার) জোহরের নামাজের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে মাহফিলের কার্যক্রম শুরু হয়। চরমোনাই মাদরাসার মূল মাঠসহ পাশের আরেকটি মাঠ নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে চরমোনাইর এই বার্ষিক মাহফিল। আজ সকাল ৮টা থেকে মাহফিলে আগত মুসল্লিদের কয়েক হাজার হালকায় বিভক্ত করে হাতে-কলমে সালাত ও ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মাহফিলের তিনদিন-ই এই কার্যক্রম চলবে।
মাহফিলের উদ্বোধনী বয়ানে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আল্লাহর সৃষ্টি মানুষকে আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কাজ দিয়ে। মানুষ সেই দায়িত্ব পালন করে কিনা তার জন্য দুনিয়া একটি পরীক্ষা কেন্দ্র। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্যেই মানুষের সফলতা-ব্যর্থতা নির্ভর করে। চরমোনাইর মাহফিলের কোনো দুনিয়াবি উদ্দেশ্য নাই বরং আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্যই এই তরিকার সকল কার্যক্রম। আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করাই এই মাহফিলের একমাত্র লক্ষ্য।
পীর সাহেব চরমোনাই তাঁর উদ্বোধনী বয়ান শেষে মাহফিলের নিয়মকানুন সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করেন।
জানা যায়, মাহফিলে আগত মুসল্লিদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট স্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এতে ১৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে আরও ৪০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবা পরিচালিত হচ্ছে। ১০টি এ্যাম্বুল্যান্স ও ২টি নৌ অ্যাম্বুলেন্স মাহফিল হাসপাতালে কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীকে তাৎক্ষণিক মাহফিল হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত রয়েছে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
২টি মাঠে মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষায় নিযুক্ত করা হয়েছে বিশাল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল টিম। হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি বা বস্তু খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রত্যেক মাঠেই রয়েছে হারানো ক্যাম্প। যে কিছু কুড়িয়ে পেলে এখানে জমা দিয়ে দেন আবার কেউ কিছু হারিয়ে ফেললে এখানে খোঁজ নেন।
সারাদেশ থেকে আগত মুসল্লিদের খাবারের জন্য সকল মাঠের চারদিকে সুপেয় নিরাপদ পানির ব্যবস্থাসহ রয়েছে সহস্রাধিক মানসম্মত টয়লেট, অজু এবং গোসলের ব্যবস্থাপনা।
তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের প্রথম দিন তথা আজ বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিন সারাদেশ থেকে আগত ওলামায়ে কিরামকে নিয়ে ওলামা সম্মেলন ও শেষদিন সকালে সারাদেশ থেকে আগত ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ছাত্র গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মাহফিলে আগত যুবক, শ্রমিকদের নিয়ে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ এবং ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজন করে বিশেষ মতবিনিময় সভা।
আগামী ২৯ নভেম্বর ২৫ শনিবার সকাল ৮.৩০ টায় হজরত পীর সাহেব চরমোনাইর আখেরি বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
উল্লেখ্য, চরমোনাই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৪ সালে। চরমোনাই মাহফিল ও দরবারের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ এছহাক (রহ.)। তার ইন্তেকালের পর ১৭৭৭ সাল থেকে এ দরবারের জিম্মাদারি পালন করেন মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.)। ২০০৬ সালে তার ইন্তেকালের পর এখন পর্যন্ত আমীরুল মুজাহিদীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।