হোম > অপরাধ

হজ যেভাবে বদলে দেয় ম্যালকম এক্সের জীবন

ইসলাম ডেস্ক

ম্যালকম এক্স ছিলেন আমেরিকার কট্টর কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী নেতা। প্রথম জীবনে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে জেলে গিয়েছিলেন। সেখানেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর মুসলিম সংগঠন নেশন অব ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হন এবং একপর্যায়ে সংগঠনটির মুখপাত্র নিযুক্ত হন। পরে নেশন অব ইসলামের প্রধান এলাইজা মুহাম্মদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হলে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গ ও মুসলমানদের অধিকার আদায়ে তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন।

ম্যালকম এক্সের জীবনদর্শনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে ১৯৬৪ সালে। পবিত্র হজব্রত পালন করে মক্কা থেকে ফেরার পর। একজন কৃষ্ণাঙ্গ জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে মক্কায় গিয়েছিলেন তিনি। তবে ফিরে এসেছেন সম্পূর্ণ অন্য মানুষ হয়ে। হজ বদলে দেয় ম্যালকমের জীবনদর্শন।

হজ করার আগে পর্যন্ত ম্যালকম মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করতেন—শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ। এই দুটি দলের ঐক্যের কোনো সম্ভাবনাই তিনি দেখতেন না। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করে আসছিলেন। তবে হজ তাঁকে সেই চিন্তা থেকে সরে আসতে বাধ্য করে। ফলে তিনি মানুষের বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।

অনেকটা শেখার প্রবল তৃষ্ণা নিয়ে ম্যালকম হজ করতে গিয়েছিলেন। মক্কায় গিয়ে তাঁর চোখ-কান খুলে যায়। সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘হজের মতো এত উষ্ণ আতিথেয়তা এবং হৃদয়োৎসারিত ভ্রাতৃত্ববোধ আমি কখনোই দেখিনি। ইবরাহিম (আ.), মুহাম্মদ (সা.)-সহ অনেক নবীর স্মৃতিবিজড়িত মক্কার পুণ্যভূমিতে বর্ণ-বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের লাখ-লাখ হজযাত্রী সেখানে অংশ নেন। সেখানে নীলচোখ স্বর্ণকেশী থেকে শুরু করে কালো চামড়ার আফ্রিকান—সব বর্ণের মানুষের উপস্থিতি ছিল। ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের অনুশীলন করতে করতেই আমরা ইবাদতে মগ্ন ছিলাম। অথচ সাদা-কালো এক কাতারে দাঁড়াতে পারে—তা কখনোই আমেরিকা আমাকে শেখায়নি।’

ম্যালকম আরও বলেছিলেন, ‘ইসলাম ধর্ম সমাজ থেকে বর্ণ-বৈষম্য একদম মুছে দিয়েছে। মুসলিম বিশ্বে ভ্রমণকালে, অনেক শ্বেতাঙ্গ মানুষের সঙ্গে আমি দেখা করি, কথা বলি; এক টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া করি, তবে সাদা চামড়ার অহংবোধ তাদের কল্পনায়ও নেই; ইসলাম তাঁদের মাথা থেকে তা পুরোপুরি সরিয়ে দিয়েছে। বর্ণ-বৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠে সব মানুষ একসঙ্গে মিলে এত নিখাদ ভ্রাতৃত্ববোধ চর্চা করতে পারে—তা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি।’

হজের যে বিষয়গুলো ম্যালকমের মনে গভীর রেখাপাত করেছিল, তার কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো—
১. হজের তালবিয়া মহান আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ তৈরি করে দেয়। এ ছাড়া হজের সবগুলো বিধানই আল্লাহর প্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। 
২. ইহরামের সাদা কাপড় মৃত্যুচিন্তার সুযোগ এনে দেয়। দুই টুকরো সাদা কাপড় পরে দৌড়াদৌড়ি কাফনের কাপড় পরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে এগিয়ে যাওয়ার            কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। 
৩. বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধ শেখায় হজ। সব ধরনের ভেদাভেদ ঘুচিয়ে মানুষের মধ্যে ভালোবাসার প্রসার ঘটানোর যুগান্তকারী শিক্ষা দেয় হজ। 
৪. হজ বিশ্বনাগরিক হতে শেখায়; শান্তি ও ঐক্যের মাধ্যমে সুসংহতভাবে বসবাস করার সবক দেয়। 
৫. পৃথিবীজুড়েই পাতানো রয়েছে শয়তানের ফাঁদ। সেই ফাঁদ থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যূহ গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দেয় হজ। 

অ্যাবাউট ইসলাম ডটনেট অবলম্বনে

মৃত ব্যক্তিকে দেখে যে দোয়া পড়তে হয়

মৃত ব্যক্তির জন্য যেভাবে দোয়া করবেন

জুমার দিনে আত্মশুদ্ধির ১০ নির্দেশনা

আজ মক্কা-মদিনায় জুমা পড়াবেন যাঁরা

আরবি মুমিনের জীবনের ব্যবহারিক ভাষা

শিলালিপি থেকে কোরআনের হরফ

আল্লামা জুলফিকার আহমদ নকশবন্দি: কালোত্তীর্ণ আধ্যাত্মিক সাধক

বাংলাদেশে আরবি ভাষা চর্চা ও ক্রমবিকাশ

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

নূরানি তা’লিমুল কোরআন বোর্ডের ফল প্রকাশ শনিবার