কী উদ্যোগে পুঁজিবাজারে চাঙাভাব চলছে? একে টেকসই করা যায় কীভাবে? আস্থার জায়গাটি শক্ত করার উপায় কী? এসব বিষয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক মেহেদী।
আজকের পত্রিকা: পুঁজিবাজার এখন বেশ চাঙা। এ বাজারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ছায়েদুর রহমান: বাজারের বর্তমান চাঙা পরিস্থিতিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। কারণ হলো, অনেক দিন বাজার মন্দা ছিল। তাই এখন মনে হচ্ছে বাজার উঠছে। কিন্তু সার্বিক অবস্থা যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখব যে বাজার এখন যে অবস্থানে এসেছে, তা এখান থেকে আরও ওপরে যাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা দুটোই রয়েছে।
আজকের পত্রিকা: আমাদের পুঁজিবাজার ওঠে ঠিকই; কিন্তু পড়তেও সময় লাগে না। এটা কেন?
ছায়েদুর রহমান: বাজার বিনিয়োগকারী নির্ভরশীল। তাদের আচরণই বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে। বাজারের আচরণ বিনিয়োগকারীদের ওপর নির্ভর করে না। আবার বিনিয়োগকারীর আচরণের জন্য অনেক কিছু নির্ভর করে। আমাদের ডিজিটাল মিডিয়ায় কিছু খবর দ্রুত ছড়ায়, যার অনেক কিছু বাস্তবতাবিবর্জিত। এসব সংবাদ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে। তারা আতঙ্কিত হয়, যা পতন ত্বরান্বিত করে। তবে গত এক বছরে বাজার ধারাবাহিকভাবে সামনে এগোচ্ছে।
আজকের পত্রিকা: কোন ধরনের পদক্ষেপ বাজারকে সামনে এগিয়ে দিচ্ছে?
ছায়েদুর রহমান: অনেক বিষয় এখানে কাজ করছে। বিনিয়োগকারীরা ভালো রিটার্ন যেখানে, সেখানেই বিনিয়োগ করে। ব্যাংকে, প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র বা এফডিআর নিরাপদ বলে মানুষ সেখানে যায়। এখন ব্যাংকের সুদ এক শতাংশে নেমে এসেছে। প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্রে ক্যাপ দেওয়া আছে। তখন বিনিয়োগকারী ভালো রিটার্নের জন্য স্বাভাবিকভাবেই পুঁজিবাজারে যাবে। ডিভিডেন্ডের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এগিয়ে। এখানে তা ব্যাংকের সঞ্চয়ের সুদের চেয়ে বেশি। এতে বাজারে আগ্রহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের।
আজকের পত্রিকা: বাজারে আস্থার জায়গাটি টেকসই করা যায় কীভাবে?
ছায়েদুর রহমান: এটা পর্যায়ক্রমে তৈরি হচ্ছে। ভুল তথ্য বাজারকে ক্ষতি করে। পুঁজিবাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। রিকশায় বা প্লেনে চড়লেও ঝুঁকি আছে। ব্যাংকে আমানতেও ঝুঁকি আছে। কোথাও ঝুঁকিমুক্ত নেই। তবে ঝুঁকি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করে চলা সম্ভব। কমিশনে নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে তারা সম্পর্ক বাড়িয়েছে। এখানে রিউমারের কারণে শেয়ারের দাম ওঠানামা করে। এখানে বিনিয়োগ শিক্ষার জায়গাটায় যথেষ্ট ঘাটতি আছে। বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ডের চেয়ে ক্যাপিটাল গেইনে মনোযোগ–এটাই সমস্যা। যদি সে ডিভিডেন্ড নিয়ে ভাবত, তাহলে শেয়ারের বাজার মূল্য যা-ই হোক, শেয়ারটা সে ধরে রাখত। এটা করে না বলেই বাজারটা ঝুঁকিতে পড়ে।
আজকের পত্রিকা: যুক্তরাষ্ট্রে রোড শো করল বিএসইসি। এটা বিদেশি বিনিয়োগে কতটা সহায়ক?
ছায়েদুর রহমান: দেশের সুযোগ-সুবিধা, আইনি কাঠামো, অর্থনৈতিক অবস্থা বিদেশে ঠিকমতো তুলে ধরতে না পারলে তারা জানতে পারবে না দেশটি কোন পর্যায়ে আছে। সুতরাং বিশ্বকে জানানোর জন্য এ ধরনের রোড শো বেশ কার্যকর উপায়। এটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়ানো এবং অবস্থান তুলে ধরতে সহায়তা করে।