হোম > বিশ্ব > যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা

কানাডার নির্বাচন: টানা চতুর্থবার জিতল লিবারেল পার্টি, কনজারভেটিভদের হার স্বীকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও লিবারাল পার্টি প্রধান মার্ক কার্নি। ছবি: সংগৃহীত

কানাডার জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি ক্ষমতা ধরে রেখেছে। তবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। এ নিয়ে দলটি টানা চতুর্থবার জিতল। বিপরীতে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পলিয়েভর হার স্বীকার করে নিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমলের শেষ দিকে লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা ক্রমশ কমছিল। এমনকি দলের ভেতরেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল তাঁর নেতৃত্ব। পরে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসেই কানাডাকে দখল করে ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করা এবং কানাডার ওপর বিপুল শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।

ট্রাম্পের এমন কর্মকাণ্ডে রাতারাতিই পাল্টে যায় কানাডীয়দের মতামত। তারা আবারও লিবারেল পার্টিকেই বেছে নিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য কার্নি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার চেয়েছিলেন, কিন্তু সেটি পূরণ হয়নি। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার এই নির্বাচনের ফলাফল জানা যায়। এই নির্বাচনের ফলে কার্নির প্রধানমন্ত্রী হওয়া একপ্রকার নিশ্চিত।

কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পলিয়েভর কার্নির লিবারেলদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর দল সংখ্যালঘিষ্ঠ সরকারকে জবাবদিহির আওতায় রাখবে। ভোট গণনা চলাকালে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী লিবারেলরা ১৬৪টি আসনে (এগিয়ে বা নির্বাচিত) ছিল। কনজারভেটিভরা ছিল ১৪৭টি আসনে। কানাডার হাউস অব কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেকোনো দলের ১৭২টি আসন প্রয়োজন।

জনমত জরিপ সংস্থা অ্যাংগাস রেইড ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট শাচি কার্ল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, লিবারেলদের এই জয় তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর নির্ভর করেছে। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে ছিল কনজারভেটিভ ছাড়া যেকোনো প্রার্থী ফ্যাক্টর, ট্রাম্পের শুল্কসংক্রান্ত ফ্যাক্টর এবং অজনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগ।’ ট্রুডোর বিদায়ের কারণে বাম-মধ্যপন্থী ভোটার ও ঐতিহ্যবাহী লিবারেল ভোটাররা দলে ফিরে এসেছে বলেও কার্ল উল্লেখ করেন।

আমদানি শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কঠোর মনোভাব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কার্নি। তিনি এ-ও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে কানাডাকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে। তবে ৯ বছরের বেশি লিবারেল শাসনের পর পরিবর্তন চেয়েছিলেন মধ্য-ডান কনজারভেটিভরা। তারা অপ্রত্যাশিত শক্তিমত্তা দেখিয়েছে এই নির্বাচনে। কানাডায় সংখ্যালঘিষ্ঠ সরকার সাধারণত আড়াই বছরের বেশি টেকে না।

এই নির্বাচনের ফলাফল লিবারেলদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্যাবর্তন। গত জানুয়ারিতে জনমত জরিপে দলটি ২০ শতাংশ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল। তখনই ট্রুডো পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং ট্রাম্প শুল্ক ও অধিগ্রহণের হুমকি দিতে শুরু করেন।

বর্তমান সরকারের পরিবহনমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড কানাডার সংবাদমাধ্যম সিটিভিতে বলেছেন, ‘গত ডিসেম্বরের কথা মনে পড়ে, যখন সবাই লিবারেল পার্টিকে বাতিল বলে ধরে নিয়েছিল। অনেকে বলছিল, আমরা পরবর্তী নির্বাচনে সরকারি দলের মর্যাদা ধরে রাখতে পারব কি না। আজ রাতে যখন স্পষ্ট যে আমরা সরকার গঠন করতে যাচ্ছি, তখন আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি অসাধারণ ফলাফল।’

গত সপ্তাহে ট্রাম্প আবার নির্বাচনী ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসেন। তিনি ঘোষণা করেন, কানাডায় তৈরি গাড়ির ওপর তিনি ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়াতে পারেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো চায় না। এর আগে তিনি বলেছিলেন, কানাডাকে ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার জন্য তিনি ‘অর্থনৈতিক শক্তি’ ব্যবহার করতে পারেন।

কার্নি জোর দিয়ে বলেছেন, অর্থনৈতিক বিষয় সামলানোয় তার পূর্ব অভিজ্ঞতা ট্রাম্পের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য তাঁকে সেরা নেতা করে তুলেছে। অন্যদিকে, পলিয়েভর জীবনযাত্রার ব্যয়, অপরাধ এবং আবাসনসংকট নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন।

এদিকে, গতকাল সোমবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা এক পোস্টে ট্রাম্প কানাডাকে ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কানাডার মহান জনগণের জন্য শুভকামনা। এমন ব্যক্তিকে নির্বাচন করুন, যাঁর শক্তি ও প্রজ্ঞা আছে। যদি কানাডা আকাঙ্ক্ষিত ৫১তম রাজ্যে পরিণত হয়, তবে তিনি আপনার কর অর্ধেক করে দেবেন, আপনার সামরিক শক্তি বিনা মূল্যে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবেন, আপনার গাড়ি, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, কাঠ, জ্বালানিসহ অন্যান্য ব্যবসার আকার চার গুণ করে দেবেন, শূন্য শুল্ক বা করসহ। বহু বছর আগের কৃত্রিমভাবে টানা রেখা আর থাকবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা দুটি ছোট দলের সমর্থকদেরও লিবারেলদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বামঘেঁষা নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ব্লক ক্যুবেকোয়া। এনডিপির নেতা জগমিত সিং নিজের নির্বাচনী এলাকায় পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, তিনি দলের নেতার পদ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন।

বেশি আসন সংবলিত টরন্টো এলাকায় কনজারভেটিভরা আসন লাভ করে লিবারেলদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ঠেকানোর পথে ছিল বলে মনে হচ্ছে। তবে অটোয়া এলাকার নিজের আসনেই পলিয়েভর পিছিয়ে ছিলেন। এর আগেও কানাডার ইতিহাসে লিবারেলরাই সর্বশেষ দল হিসেবে যারা টানা চার নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। পলিয়েভর তাঁর প্রচারণায় অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে জোর দিয়েছিলেন এবং দেশকে ঠিক করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন, যার ব্যাপারে তিনি বলেছেন লিবারেলরা ‘ভেঙে দিয়েছে।’

মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট

এইচ-১বি ভিসার ফি বাড়ানোর পর এবার যাচাই প্রক্রিয়াও কঠোর করল ট্রাম্প প্রশাসন

সোমালি অভিবাসীদের ‘আবর্জনা’ বললেন ট্রাম্প

আমি আগের তুলনায় এখন আরও বেশি প্রাণবন্ত—বলেই মন্ত্রিসভায় ঘুমিয়ে পড়লেন ট্রাম্প

বাইডেনের ‘অটোপেনে’ সই করা সব নথি বাতিল করছেন ট্রাম্প

গ্রিন কার্ড থেকে নাগরিকত্ব—১৯ দেশের অভিবাসীদের সব আবেদন থামিয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্র

নিউইয়র্কে শ্রম আইন লঙ্ঘন: ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার জরিমানা দিচ্ছে স্টারবাকস

ট্রাম্পের এমআরআই পরীক্ষার রিপোর্টে যা আছে

‘শিগগির ক্ষমতা ছাড়’—মাদুরোকে ট্রাম্পের আলটিমেটাম

আমার মাথায় সমস্যা নেই, বিশ্বাস না হলে এমআরআই রিপোর্ট দেখাব—সাংবাদিকদের ট্রাম্প