১৬ জুন ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন ৯৫ বছর বয়সী ইয়েভেট শ্মিলোভিৎস। গতকাল সোমবার তাঁকে হলোকাস্টে বেঁচে ফেরা নারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ।
কানাডাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল পোস্ট জানিয়েছে, ১৬ জুন ইরানের হামলায় শ্মিলোভিৎসসহ মোট চারজন ইসরায়েলি নিহত হন। নিহত অন্যরা হলেন ইয়াকভ বেলা, দেশি বেলো এবং ডেইজি ইৎসহাকি।
পেতাহ টিকভার মেয়র রামি গ্রিনবার্গ এই মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা মাথা নত করে চারজন প্রিয় নাগরিকের মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করছি। তাঁরা সবাই ছিলেন স্নেহভাজন, নিরীহ মানুষ। যাদের একমাত্র অপরাধ ছিল একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন করার আকাঙ্ক্ষা।’
তিনি শ্মিলোভিৎসের পরিবারকে সহমর্মিতা জানান এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। শ্মিলোভিৎস তিন নাতনি ও চার প্রপৌত্র-পৌত্রীকে রেখে গেছেন।
হলোকাস্ট সারভাইভারস রাইটস অথরিটি শ্মিলোভিৎসের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছে, ‘তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমাদের আশার ও পুনর্জন্মের পথে হাঁটার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। তাঁরা ছিলেন সেই সব নারী, যাঁরা নিজেদের আলোয় চারপাশকে আলোকিত করতেন।’ সংস্থাটি জানায়, তারা শ্মিলোভিৎস এবং একই হামলায় নিহত বেলা পরিবারের পাশে থাকতে প্রস্তুত।
শ্মিলোভিৎসকে আজ মঙ্গলবার পেতাহ টিকভায় সমাহিত করা হয়েছে।
‘হলোকাস্ট’ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে নাৎসি জার্মানির নেতৃত্বে একটি গণহত্যা। এর মাধ্যমে আনুমানিক ৬০ লাখ ইহুদিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৩৩ সালে অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৯৪৫ সালে নাৎসি শাসনের পতন পর্যন্ত এই নিধনযজ্ঞ চলে। ইহুদিদের পাশাপাশি রোমা (যাযাবর), শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী, সমকামী, রাজনৈতিক বিরোধী ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপরও অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
নাৎসিদের মতে, জার্মান জাতি ছিল শ্রেষ্ঠ ‘আর্য’ জাতি, আর ইহুদিরা ছিল সমাজ ও সভ্যতার জন্য হুমকি। এই বিশ্বাস থেকেই ইহুদিদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তাদের বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়, শ্রম ও নির্যাতন শিবিরে পাঠানো হয় এবং অবশেষে ‘ডেথ ক্যাম্প’ বা মৃত্যুশিবিরে গ্যাস চেম্বারে হত্যা করা হয়। অউশভিৎজ, ট্রেবলিঙ্কা, সাবিবোর—এসব মৃত্যুশিবির আজও বিশ্বের কাছে ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে আছে।