হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

রয়টার্সের প্রতিবেদন

সংখ্যালঘু আলাওয়িদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে সিরিয়ার নতুন সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে আলাওয়ি সম্প্রদায়ের ওপর চালানো ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনায় দেশটির নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সামরিক ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মার্চ মাসের ৭ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে চালানো এসব হামলায় সংখ্যালঘু আলাওয়ি সম্প্রদায়ের প্রায় ১ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হয়। নিখোঁজ হয় আরও অনেকে।

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আল-রুসাফা গ্রামের ২৫ বছর বয়সী সুলায়মান রশিদ সাদের বুকে ছুরি চালিয়ে তাঁর হৃৎপিণ্ড বের করে শরীরের ওপরে রাখা হয়েছিল। তাঁর পরিবারের হাতে হত্যার শিকার মানুষের একটি তালিকা পৌঁছায়—যেখানে ৬০ জনের নাম ছিল, যাদের মধ্যে ছিল তাদের আত্মীয়, প্রতিবেশী ও শিশুরাও।

রশিদ সাদের বাবাকে হত্যাকারীরা ছেলের ফোন থেকে কল দিয়ে জানায়, ‘লাশটা নিয়ে যাও, ওটা নাপিতের দোকানের পাশে।’ সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, ছেলের বুক চেরা, হৃৎপিণ্ড তুলে নিয়ে রাখা ছিল লাশের ওপর। এই হত্যাকাণ্ড সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে আলাওয়িদের ওপর চালানো গণহত্যার একটি অংশমাত্র। ঘটনাগুলো ঘটে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সংঘটিত এক বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ায়। ওই বিদ্রোহে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ২০০ সদস্য নিহত হন বলে দাবি বর্তমান সরকারের।

২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি দামেস্কের প্রেসিডেনশিয়াল প্রাসাদে মিলিত হন বিদ্রোহী কমান্ডাররা। হায়াত তাহরির আল-শামসের (এইচটিএস) নেতা আহমেদ আল-শারা (আবু মুহাম্মদ আল-জুলানি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন এবং আসাদ সরকারের সংবিধান, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা কাঠামো বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এর পর থেকেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সিরিয়ার নতুন সেনাবাহিনীতে একীভূত করা হয়। প্রতিটি গোষ্ঠী পায় নিজস্ব ডিভিশন ও সামরিক পদমর্যাদা। তবে এইচটিএস আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে তাদের ইউনিটগুলো এখনো সক্রিয়।

রয়টার্সের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশজুড়ে ৪০টি স্থানে গণহত্যা, লুটপাট ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার পেছনে রয়েছে পাঁচটি প্রধান গোষ্ঠী। এতে ১ হাজার ৪৭৯ জন আলাওয়ি নিহত হয়েছে।

পাঁচটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে ছিল—

এইচটিএসের ইউনিট-৪০০

এইচটিএসের ইউনিট-৪০০-এর অধীনে উসমান ব্রিগেড ও সাধারণ নিরাপত্তা সংস্থা (জিএসএস) অন্তত ১০টি স্থানে হামলায় অংশ নেয়, যেখানে প্রায় ৯০০ জনকে হত্যা করা হয়। জিএসএস আগে ইদলিবে এইচটিএসের প্রধান আইনশৃঙ্খলা সংস্থা হিসেবে পরিচিত ছিল, যা এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে।

ইউনিট-৪০০-এর সদস্যদের পশ্চিমাঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই ইউনিট সাবেক নেভাল একাডেমিকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সরাসরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্তরে জবাবদিহি করছে।

তুরস্ক-সমর্থিত মিলিশিয়া

সুলতান সুলায়মান শাহ ব্রিগেড (আমশাত নামেও পরিচিত) ও হামজা ডিভিশন নামে দুটি তুরস্ক-সমর্থিত গোষ্ঠী অন্তত আটটি স্থানে হামলা চালায়, যেখানে প্রায় ৭০০ জন নিহত হয়। এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে আগে থেকেই অপহরণ, যৌন সহিংসতা ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।

তুরস্ক-সমর্থিত মিলিশিয়াদের একটি হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে দেখা গেছে। এতে এক মিলিশিয়া কর্মীকে বলতে শোনা গেছে, ‘ক্যামেরা বন্ধ করো। সব পুরুষকে হত্যা করো। তাদের রক্ত শূকরের মতো অপবিত্র।’ তিনি সংখ্যালঘু আলাওয়ি সম্প্রদায়ের পুরুষদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।

সুন্নি বিদ্রোহী গোষ্ঠী

জায়েশ আল-ইসলাম, জায়েশ আল-আহরার ও জায়েশ আল-ইজ্জা অন্তত চারটি স্থানে হামলায় জড়িত ছিল, যেখানে প্রায় ৩৫০ জন নিহত হয়। এই জায়েশ আল-ইসলাম ২০১৩ সালে দামেস্কে আলাওয়ি নারী ও পুরুষদের লোহার খাঁচায় বন্দী করে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল।

বিদেশি যোদ্ধারা

তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি (টিআইপি), উজবেক, চেচেন ও কিছু আরব যোদ্ধা ছয়টি স্থানে অন্তত ৫০০ জন আলাওয়িকে হত্যা করেছে বলে রয়টার্সের অনুসন্ধানে জানা গেছে।

সাধারণ সুন্নি গ্রামবাসী

বহু বছরের গৃহযুদ্ধ ও আসাদ সরকারের নিপীড়নের কারণে সাধারণ সুন্নি জনগণও প্রতিবেশী আলাওয়ি গ্রামে আক্রমণ চালায়। এসব আক্রমণে আরজা ও বানিয়াস শহরের দুটি স্থানে প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়।

সিরিয়ার নতুন সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় উপকূলীয় অঞ্চলকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের অধীনে দায়িত্ব দেয়। হাজার হাজার যোদ্ধা ও অস্ত্র সেখানে পাঠানো হয় বিদ্রোহ দমনে। এই সেনা অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন সুলতান সুলায়মান শাহ ব্রিগেডের মোহাম্মদ আল-জসিম।

আহমেদ আল-শারা ক্ষমতা গ্রহণের দিন বলেছিলেন, ‘নতুন সিরিয়ার সূর্য উদিত হয়েছে।’ কিন্তু সেই সূর্য আলাওয়িদের জন্য বয়ে এনেছে মৃত্যুর বিভীষিকা। পুরোনো শত্রুতা ভুলে গোষ্ঠীগুলো একজোট হলেও তাদের হাতে সংঘটিত সহিংসতা নতুন সরকারের ভাবমূর্তিকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা অবশ্য এসব হামলার দায় অস্বীকার করেছেন। তিনি অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে রয়টার্সের অনুসন্ধানে জানা গেছে, হামলাকারীদের সঙ্গে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের একটি সরাসরি চেইন অব কমান্ড বিদ্যমান ছিল। সুতরাং এর থেকে ধারণা করা যায়, এই গণহত্যার বিচার কখনোই হবে না।

গাজায় হামাসবিরোধী ইসরায়েলি প্রক্সি গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাব নিহত, কে তিনি

গাজায় যুদ্ধবিরতি খুব ভালোভাবে চলছে, দ্বিতীয় ধাপ শুরু শিগগির: ট্রাম্প

মার্কিন মধ্যস্থতায় ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবার সরাসরি আলোচনায় লেবানন-ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের নেলসন ম্যান্ডেলা: বারঘৌতির মুক্তির দাবিতে সোচ্চার দুই শতাধিক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

‘সর্বত্র ভূত দেখে’ যত্রতত্র ‘বোমা ফেলছেন বিবি’, লাগাম টানতে ব্যর্থ যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই একমাত্র সমাধান—পোপ

দুর্নীতির মামলায় প্রেসিডেন্টের কাছে নেতানিয়াহুর ক্ষমা প্রার্থনা

গাজার পুলিশ বাহিনী গঠনে হাজারো ফিলিস্তিনিকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মিসর

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছে, নিহত ৭০ হাজার ছাড়াল

সংঘবদ্ধ নির্যাতন ‘কার্যত’ ইসরায়েলের রাষ্ট্রনীতি, কুকুর হামলা, যৌন নির্যাতনের চিত্র জাতিসংঘের প্রতিবেদনে