সিরিয়ায় ইসরায়েলের বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে তুরস্ক তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে তুরস্ক তাদের এই অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। গতকাল বুধবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, আঙ্কারা আঞ্চলিক শক্তি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ রাখছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদুলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্ক এর আগে লেবানন, ইরান, সিরিয়াসহ অন্য আঞ্চলিক দেশগুলোতে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক হামলাকে তারা গণহত্যা বলেও অভিহিত করেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে তুরস্ক ইসরায়েলের সঙ্গে সব প্রকার বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে এবং তেল আবিব থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে আলোচনার জন্য ফিরিয়ে এনেছে।
নিউইয়র্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় ফিদান জানান, তিনি সিরিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টম ব্যারাক ও তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন। একই সঙ্গে সিরিয়া, জর্ডান ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনেও তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ফিদান বলেন, ‘আমরা একই সময়ে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ইসরায়েলিদের কাছে আমাদের নিজস্ব মতামত জানিয়েছি। আমরা বলেছি, আমরা এখানে কোনো অস্থিতিশীলতা চাই না।’ তিনি আরও বলেন, সিরিয়ার নতুন সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা ছাড়া এই সংঘাতের সমাধান করতে পারবে না।
এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে জানিয়েছেন, সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘ইসরায়েলের আগ্রাসন পুরো অঞ্চলের জন্য হুমকি’।
বেশ কয়েক দিনের সংঘর্ষের পর সংখ্যালঘু দ্রুজদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি করেছে সিরিয়া। বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে এরদোয়ান বলেন, তুরস্ক সিরীয় জনগণের পাশে থাকবে, যেমনটা তারা এখন পর্যন্ত করে এসেছে।
অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা তাঁর পক্ষ থেকে সিরিয়ার রাজনৈতিক ঐক্য, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে আঙ্কারার সমর্থনের জন্য তুর্কি প্রেসিডেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৩ জুলাই থেকে সিরিয়ার দক্ষিণের প্রদেশ সুয়েইদায় বেদুইন আরব উপজাতি ও দ্রুজ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ছোট আকারের সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৩৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিরিয়ার সরকার আসাদের পতনের পর প্রথমবারের মতো সুয়েইদায় সেনা মোতায়েন করে।
পরে দ্রুজ সংখ্যালঘুদের ওপর সরকারি বাহিনী কর্তৃক হত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। আর এই হামলার জবাবে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে ‘ধ্বংস’ করার ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এর এক দিন আগে ইসরায়েল সিরিয়ার প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি বিমান হামলা চালায়। এ ছাড়া হুমকি দেয়, যদি সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে দেশের দক্ষিণাঞ্চল অর্থাৎ সুয়েইদা থেকে প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে তারা হামলা আরও বাড়াবে। ইসরায়েলের এই হুমকির এক দিন পর সুয়েইদা অঞ্চল থেকে সরকারি বাহিনীকে সরিয়ে নিয়েছে সিরিয়া।