হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

বুশেহরে হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘ফুকুশিমা’ ঘটতে পারে, বিশ্লেষকদের হুঁশিয়ারি

আল জাজিরা

পারস্য উপসাগরের উপকূলে ইরানের বুশেহর শহরে অবস্থিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যদি কোনো হামলার শিকার হয়, তবে তার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। শুধু ইরান নয়, পুরো উপসাগরীয় অঞ্চল পড়বে বিপদের মুখে। এমনটাই উঠে এসেছে সাবেক আন্তর্জাতিক পরমাণু পরিদর্শক এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণে।

সাবেক আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শক ও স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) ফেলো রবার্ট কেলি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আল জাজিরাকে বলেন, বুশেহর পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানলে ঘটতে পারে ‘ফুকুশিমা-ধরনের’ একটি দুর্ঘটনা।

তাঁর ভাষায়, ‘যদি বুশেহরে বোমা ফেলা হয় কিংবা কুলিং সিস্টেম ব্যাহত হয়, তবে রিঅ্যাক্টরটি গলে পড়তে পারে, এবং তা থেকে অল্প পরিমাণে হলেও তেজস্ক্রিয় গ্যাস নির্গত হতে পারে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল জাপানের ফুকুশিমায়।’

তবে তিনি উল্লেখ করেন, ফুকুশিমায় কেউ মারা যায়নি এবং তেজস্ক্রিয়তা খুব দূর পর্যন্ত ছড়ায়ওনি। ‘বুশেহর একটি জনবহুল শহর, শুধু একটি স্থাপনা নয়। কেউ যদি শহরটিতে হামলা চালায়, সেটাও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে,’ বলেন কেলি।

আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, বুশেহরের পারমাণবিক কেন্দ্রটি রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত। কেলি মনে করেন, এখানে হামলা হলে মস্কো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

সিমুলেশনে উঠে এসেছে ভয়াবহ চিত্র

আল জাজিরার গবেষণা শাখা AJLabs ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক Nonproliferation Policy Education Center (NPEC) যৌথভাবে ২০২০ সালের পরিবেশগত তথ্যের ভিত্তিতে একটি সিমুলেশন চালায়। এতে দেখা গেছে, বুশেহরে যদি Spent Fuel Pond (SFP)–এ আগুন লাগে কিংবা রিঅ্যাক্টর কোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কী উঠে এসেছে সিমুলেশনে?

শুধু একটি রিঅ্যাক্টরে আঘাত এলেও, বাধ্যতামূলকভাবে ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে হতে পারে।

১টি SFP–তে আগুন লাগলে, ৩৪ লাখ মানুষকে সরাতে হতে পারে।

২টি SFP ক্ষতিগ্রস্ত হলে, এই সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৬৭ লাখে।

সিমুলেশনে আশপাশের দেশ ইরান, কাতার, বাহরাইন, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুর্কমেনিস্তানকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বুঝতে সুবিধা হয় এমনভাবে সিমুলেশনটি চারটি মানচিত্রে দেখানো হয়েছে। এতে রঙিনভাবে দেখানো হয়েছে কোন কোন এলাকায় চিরতরে বসবাস নিষিদ্ধ হতে পারে এবং কোথায় স্বেচ্ছামূলক সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে।

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রঙে চিহ্নিত এলাকাগুলোয় বহু দশক ধরে মানুষ বাস করতে পারবে না। বহু এলাকা কার্যত অচল হয়ে পড়তে পারে। অর্থনীতি, কৃষি, পানীয় জল, জনস্বাস্থ্য—সবখানেই পড়বে ব্যাপক প্রভাব।

কেন এত ভয়াবহ?

Spent Fuel Pool (SFP)–এ থাকে ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি। এগুলো প্রচণ্ড তেজস্ক্রিয় এবং অত্যন্ত গরম। এগুলো শীতল পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। যদি সেগুলোতে আগুন ধরে বা পানি শুকিয়ে যায়, তখন তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, ঘটে বিস্ফোরণ। তাতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে।

এ ঘটনা অতীতে চেরনোবিল ও ফুকুশিমায় ঘটেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বুশেহরে তা হলে আকারে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারে, কারণ এটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং উপসাগরের একেবারে কোল ঘেঁষে।

ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিপজ্জনক

বুশেহর রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত। ফলে, সেখানে হামলা হলে তা শুধু ইরান নয়, রাশিয়ারও সরাসরি অংশগ্রহণকে স্পর্শ করতে পারে। এতে আঞ্চলিক যুদ্ধ একধাপ বেড়ে যেতে পারে।

বিশ্লেষক রবার্ট কেলির সতর্কতা এবং আল জাজিরার সিমুলেশন একই বার্তা দেয়—বুশেহরে একটি হামলা শুধু একটি স্থাপনাকে ধ্বংস করবে না, বরং উপসাগরীয় অঞ্চলের জনজীবন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে দীর্ঘমেয়াদে পঙ্গু করে দিতে পারে।

এই কেন্দ্রকে ঘিরে এখনো কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। এমন বাস্তবতায়, কেবল সামরিক নয়, মানবিক ও পরিবেশগত বিবেচনাতেও এই ঝুঁকির গভীরতা অনুধাবন করা জরুরি।

নামাজরত ফিলিস্তিনির ওপর গাড়ি চালিয়ে দিলেন ইসরায়েলি সেনা

গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই বড়দিনের আনন্দ খুঁজছে ক্ষুদ্র খ্রিষ্টান সম্প্রদায়

শানলিউরফা: নবীদের যে নগরে মিলেছে তিন ধর্মের মানুষ

৭ অক্টোবরের দায় এড়াতে ফন্দি খোঁজার দায়িত্ব দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু: সাবেক মুখপাত্র

মসজিদে নববির মুয়াজ্জিন শেখ ফয়সাল নোমান আর নেই

ইসরায়েল আর ‘কখনোই গাজা ত্যাগ করবে না’

তুরস্কে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে লিবিয়ার ‘জাতীয় ঐক্যের সরকারের’ সেনাপ্রধান নিহত

গাজায় ৭৩ দিনে ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের শিকার ৪১১ ফিলিস্তিনি, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ৮৭৫ বার

যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় দুবার সন্তান প্রসবের ভয়াবহ স্মৃতি হাদিলের

আসাদের খালি হয়ে যাওয়া কুখ্যাত কারাগারগুলো ভরে উঠছে আবার