২০১৮ সালে ভালোবাসার টানে ইরানে গিয়েছিলেন মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য মাইকেল হোয়াইট। ইন্টারনেটে পরিচিত ইরানি নারী সামানেহ আব্বাসির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল—তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন এবং ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ করেছেন।
হোয়াইটকে নেওয়া হয়েছিল মাশহাদের গোপন বন্দিশালায়। সেখানে তাঁকে বারবার জেরা ও নির্যাতনের মুখোমুখি করা হয়। এমনকি একবার তিনি আত্মহত্যারও চেষ্টাও করেন।
অবশেষে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় ভাকিলাবাদ কারাগারে। সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় ইরানি রাজনৈতিক বন্দী মেহদি ওয়াতানখাহের। মেহদির সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও সাহসিকতা হোয়াইটের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। হোয়াইট বলেন, ‘প্রথম যেদিন মেহদিকে দেখি, বুঝে গিয়েছিলাম সে আলাদা। তার চোখে ছিল সহানুভূতি, আর সে ইংরেজি জানার কারণে আমরা কথা বলতে পারতাম।’
মেহদি পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে হোয়াইটের পরিবার ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখনই প্রথমবারের মতো আমেরিকান কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, হোয়াইট ইরানে বন্দী।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময় হোয়াইট গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর মৃত্যুর সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ভয়েই হয়তো ইরানি কর্তৃপক্ষ তাঁকে তেহরানের একটি নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করে। পরে ওই বছরের ৪ জুন হোয়াইটকে মুক্তি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আটক ইরানি চিকিৎসক মাজিদ তাহেরির সঙ্গে বন্দিবিনিময় করা হয়।
রোববার (২৭ জুলাই) ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, মুক্তির পর হোয়াইট তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখেন। মেহদিকে তিনি মানবিক আশ্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। মেহদি এখন সান ডিয়েগোতে পাইলট হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেছেন। মেহদি বলেন, ‘সবকিছু যেন দুঃস্বপ্ন। তবে এমন দুঃস্বপ্ন, যা আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না।’
হোয়াইট ইরানি সরকারের সমালোচক হলেও তিনি ইরানের জনগণকে শ্রদ্ধা করেন। তিনি বলেন, ‘এই মানুষগুলো অসাধারণ। তারা ভালোবাসা, স্বাধীনতা এবং একটি ভালো জীবনের যোগ্য।’