রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরকে সামনে রেখে মস্কো নয়াদিল্লিকে একটি বড় সামরিক প্রস্তাব দিয়েছে। এটি ভারতের ভবিষ্যৎ আকাশযুদ্ধ সক্ষমতায় আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ভারতের কাছে তাদের নতুন পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ যুদ্ধবিমান সুখোই সু-৫৭-এর প্রযুক্তি সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত করে দিতে প্রস্তুত।
রাশিয়ার সরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থা রোসটেকের প্রধান নির্বাহী সের্গেই চেমেজভ জানিয়েছেন, প্রস্তাব অনুযায়ী প্রথমে রাশিয়ায় তৈরি সু-৫৭ বিমান ভারতকে সরবরাহ করা হবে এবং পরবর্তীকালে ধাপে ধাপে এর উৎপাদন ভারতে স্থানান্তরিত করা হবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে নিজেদের প্রযুক্তিতে ভারতকে এ ধরনের প্রবেশাধিকার কোনো দেশই দেয়নি। প্রস্তাবটি গ্রহণ করলে ভারত এমন সক্ষমতা পাবে, যা পশ্চিমা দেশগুলো বারবার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত উন্নত মানের হেলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করতে সক্ষম হবে।
দুবাই এয়ার শো-২০২৫ এর ফাঁকে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চেমেজভ বলেন, রাশিয়া ভারতকে পঞ্চম প্রজন্মের বিমান প্রযুক্তির পুরো ইকোসিস্টেম—ইঞ্জিন, সেন্সর, হেলথ উপকরণসহ সবকিছু উন্মুক্ত করে দিতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘ভারত-রাশিয়ার বহু বছরের সম্পর্ক রয়েছে। যখন ভারত নিষেধাজ্ঞার মুখে ছিল, তখনো আমরা ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে অস্ত্র সরবরাহ করেছি...আজও আমরা একই নীতি অনুসরণ করি। ভারতের যা প্রয়োজন, আমরা তা সরবরাহ করব।’
সু-৫৭ বা অতিরিক্ত এস-৪০০ সিস্টেম সরবরাহের সম্ভাবনা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়। ভারত যা চাইবে, আমরা তা দিতে প্রস্তুত।’
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় অস্ত্র রপ্তানিকারক সংস্থা রোসোবোরনএক্সপোর্টের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, মস্কো শুধু লাইসেন্সপ্রাপ্ত উৎপাদন সুবিধাই নয়, বরং ইঞ্জিন, অপটিকস, এএইএসএ রাডার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, লো-সিগনেচার প্রযুক্তি এবং আধুনিক এয়ার উইপনসহ পঞ্চম প্রজন্মের টেকনোলজি ট্রান্সফারেরও প্রস্তাব দিচ্ছে।
দ্য ইউরেশিয়া টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত স্কোয়াড্রন লিডার ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বিজয়েন্দ্র কে ঠাকুর বলেন, রাশিয়ার প্রস্তাবে সু-৭৫ চেকমেটও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁর মতে, মস্কো ইতিমধ্যে অংশীদার দেশের ভেতরেই সু-৭৫-এর কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে ভারতই তাদের পছন্দ।
এটি বাস্তবায়িত হলে তুলনামূলক কম খরচে ভারতের পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেটের ঘাটতি পূরণ হবে। পাশাপাশি ব্রহ্মসের মতোই রপ্তানির মাধ্যমে ভারতের জন্য বিপুল অর্থ আয়ের সুযোগ তৈরি হবে।
এদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামী ডিসেম্বর মাসে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে নয়াদিল্লি সফরে আসবেন। তিনি শেষবার ভারতে এসেছিলেন ২০২১ সালের ডিসেম্বরে।
এবারের সফরে প্রতিরক্ষা খাতে বড় ধরনের চুক্তি ও ঘোষণা আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কূটনৈতিক স্তরে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে রুশ প্রেসিডেন্টের শীর্ষ উপদেষ্টা ও রাশিয়ার মেরিটাইম বোর্ডের চেয়ারম্যান নিকোলাই পাত্রুশেভ দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে দুই দেশের মধ্যে সামুদ্রিক সহযোগিতা ও বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে রাশিয়ার দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আলোচনায় রাশিয়া-ভারত সহযোগিতার বিভিন্ন দিক, বিশেষত সামুদ্রিক খাতে পারস্পরিক আগ্রহ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে হতে যাওয়া ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতিও আলোচনা করা হয়েছে।’