আসামে অবৈধ অভিবাসী শনাক্ত ও বহিষ্কার প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনল রাজ্য সরকার। এবার থেকে কোনো বিদেশি সন্দেহভাজনকে আটক করা হলে আর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে মামলা চালিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হবে না। জেলা কমিশনার ও সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে সরাসরি ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য মন্ত্রিসভা নতুন এক স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুমোদন করেছে, যা কার্যকর হবে অবিলম্বে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের আগে যাঁরা আসামে এসেছেন, তাঁরা নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের পর যাঁরা এসেছেন, তাঁদের বহিষ্কার করা হবে।’
এই নির্দেশনার ফলে এখন থেকে সন্দেহভাজন বিদেশিকে ১০ দিনের মধ্যে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে হবে। জেলা কমিশনার প্রমাণ সন্তোষজনক না পেলে লিখিতভাবে মতামত দেবেন এবং ফেরত পাঠানোর নির্দেশ জারি করবেন। তারপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্দিষ্ট রুট দিয়ে সেই বিদেশিকে ফেরত পাঠানো হবে।
এখন পর্যন্ত রাজ্যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের কাছে ৮৮ হাজারের বেশি মামলা ঝুলে আছে। দীর্ঘসূত্রিতা এবং জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে এসব মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব হয়নি। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে ১০ দিনের মধ্যেই মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ তৈরি হবে।
সন্দেহভাজনেরা যদি সীমান্তের শূন্যরেখা-সংলগ্ন এলাকায় ধরা পড়ে কিংবা রাজ্যে প্রবেশের ১২ ঘণ্টার মধ্যে আটক হয়, তবে তাদের কোনো প্রক্রিয়া ছাড়াই ‘পুশব্যাক’ করা হবে। আর যদি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল আগেই কোনো ব্যক্তিকে বিদেশি হিসেবে ঘোষণা করে থাকে, সে ক্ষেত্রে শুধু কমিশনারের আদেশই যথেষ্ট।
এসওপিতে বলা হয়েছে, ফেরত পাঠানোর আদেশের পর বিদেশিকে প্রথমে হোল্ডিং সেন্টারে রাখা হবে। পরে উপযুক্ত সময়ে নির্ধারিত রুটে তাঁকে ফেরত পাঠানো হবে। এতে করে পুলিশি প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং প্রশাসনের ওপর চাপ কমবে।
এই সিদ্ধান্ত আসামের রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিরোধী শিবিরের একাংশ বলছে, এভাবে প্রশাসনিক ক্ষমতা বাড়িয়ে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালকে পাশ কাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে শাসক শিবির বলছে, আদালতের রায় অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করবে।
সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এক রায়ে বলা হয়েছে, আসামের বিশেষ পরিস্থিতিতে ১৯৫০ সালের আইনের আওতায় এ প্রক্রিয়া চালানো যাবে। সংবিধান বেঞ্চ স্পষ্ট করেছে, ১৯৭১ সালের কাট-অফ বছরকে মেনে এই আইন কার্যকর করতে হবে।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বহু বছরের অচলাবস্থা ও মামলাজট নিরসনে বড় অগ্রগতি হতে পারে। তবে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, নাগরিকদের জন্য প্রমাণ প্রদর্শনের সুযোগ এবং মানবিক দিকগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আরও পড়ুন: