হোম > বিশ্ব > ভারত

ট্রাম্প-মামদানির বৈঠকের পর ভারতের জন্য যে বার্তা দিলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী প্রচারণায় একে অপরের বিরুদ্ধে তীব্র বাক্যবাণ ছুড়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জোহরান মামদানি। কিন্তু মামদানি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর যখন ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন তখন যা ঘটল, তা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত—বৈঠকটি পরিণত হলো এক বিরল আন্তরিকতা ও প্রশংসার উৎসবে।

এ নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, বিশ্লেষক বিষয়টিকে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করছেন। তবে একটি বিষয় সবার নজরে এসেছে। আর তা হলো, কংগ্রেস সংসদ সদস্য শশী থারুরের মন্তব্য। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সদ্য নির্বাচিত নিউইয়র্কের মেয়র জোহরান মামদানি হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করে গণতান্ত্রিক চেতনার উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

থারুর মনে করেন, ‘নির্বাচনের পর সহযোগিতা করতে শেখা’—এটাই ছিল ট্রাম্প-মামদানির বৈঠক থেকে তাঁর নেওয়া মূল বার্তা।

সম্প্রতি যাঁর মতামত নিজ দলের ভেতরেই অস্বস্তি তৈরি করেছে, সেই থারুর এক্সে দুই মার্কিন নেতার ভিডিও শেয়ার করে বলেন, তিনি ভারতেও এমন সহযোগিতা দেখতে চান।

থারুর লিখেছেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে ঠিক এভাবেই কাজ করা উচিত। নির্বাচনে নিজের অবস্থান নিয়ে আবেগের সঙ্গে লড়ো, বিন্দুমাত্র ছাড় দিয়ো না। কিন্তু নির্বাচন শেষ হলে এবং জনগণ তাদের মত জানালে, দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে শিখতে হবে। আমি চাই ভারতেও এমনটা হোক। আমি নিজে সেই দিকেই এগোচ্ছি।’

থারুরের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, এক রিপোর্টার মামদানিকে জিজ্ঞেস করছেন—তিনি কি এখনো ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিস্ট’ মনে করেন? মামদানি উত্তর দেওয়ার আগেই ট্রাম্প হেসে বলেন, তাঁকে ফ্যাসিস্ট বলা হলে তাঁর আপত্তি নেই।

আসলেই আমাদের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে এমন হওয়া উচিত। দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন দলের হতে পারেন। কিন্তু দেশ একটা, আর এই দেশের স্বার্থে দল-মত ভুলে শুধু মানুষের জন্য কাজ করাই মহানুভবতা। ট্রাম্প-মামদানির সাক্ষাৎ মূলত এ বার্তাই দিচ্ছে।

বৈঠকের সময় সাংবাদিকেরা বারবার দুই নেতার মধ্যকার মতপার্থক্য ও অতীতের কটু মন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করলেও, তাঁরা বারবারই সংঘাত এড়িয়ে যান এবং সাধারণ ঐক্যের জায়গাগুলো তুলে ধরেন। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুখ থেকে একের পর এক প্রশংসা বাক্য বেরিয়ে আসে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, তিনি (মামদানি) আসলে কিছু কনজারভেটিভকে অবাক করতে যাচ্ছেন। তাঁর কিছু ধারণা, সত্যিই আমার ধারণার মতোই। আমি যা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি বিষয়ে আমরা একমত। আমি মনে করি, এই মেয়র এমন কিছু করতে পারেন—যা সত্যিই দুর্দান্ত হবে।’

সাংবাদিকেরা সিটির ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, মামদানির ক্ষতি নয়, তাঁকে সাহায্য করার কথাই ভাবছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দিক থেকে প্রশংসা বেশি এলেও, মামদানি কৌশলে ট্রাম্পকে নিয়ে সরাসরি সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকেন। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধ নিয়ে আলোচনা না করে, বারবার তাঁর নির্বাচনী অ্যাজেন্ডা—জীবনযাত্রার ব্যয় ও সাশ্রয়ী ব্যবস্থাতে ফিরে যান।

এমনকি, এক সাংবাদিক যখন মামদানিকে ইসরায়েল-গাজা প্রসঙ্গে তাঁর পূর্ববর্তী মন্তব্য (যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে গণহত্যার সহযোগী বলা) নিয়ে প্রশ্ন করেন, তখন তিনি তা স্বীকার করেও দ্রুত আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে সাশ্রয়ী ব্যবস্থার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিকে নিয়ে আসেন।

অভ্যন্তরীণ ও কূটনৈতিক নীতিতে মামদানি ট্রাম্পকে সমর্থন না করলেও, তিনি প্রেসিডেন্টকে খানিকটা স্বস্তি দিয়ে বলেন, ‘আমি বলতে পারি, জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর আপনার মনোযোগের কারণে অনেক নিউইয়র্কবাসী সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। আমি সেই সাশ্রয়ী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছি।’

বৈঠকে শুধু প্রশংসাই নয়, মনে হচ্ছিল যেন ট্রাম্প তাঁর নতুন ‘সঙ্গী’র ঢাল হিসেবে কাজ করছেন। মামদানি অতীতে ট্রাম্পকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বা ‘স্বৈরশাসক’ বললেও, ট্রাম্প তাতে গুরুত্ব দেননি।

এদিকে, শশী থারুরের মন্তব্যকে এবার প্রশংসা করেছে বিজেপি। তবে কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষও করেছে। দলের মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেন, থারুর তাঁর ‘জটিল’ পোস্টের মাধ্যমে কংগ্রেস নেতাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন—গান্ধী পরিবারের চেয়ে দেশের স্বার্থকে আগে রাখতে হবে।

এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘ড. থারুর আবারও কংগ্রেসকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে জাতীয় স্বার্থ পারিবারিক স্বার্থের ওপরে হওয়া উচিত। নির্বাচন হেরে গিয়ে ক্ষুব্ধ আচরণ করার বদলে গণতান্ত্রিক আচরণ করা শিখতে হবে।’

তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস নির্বাচন হেরে গেলেই অভিযোগ তোলে, আর থারুর দলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোকেও জাতীয় স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে হয়।

তিনি প্রশ্ন তুললেন—রাহুল গান্ধী কি এই বার্তা বুঝবেন? আর আশঙ্কা প্রকাশ করলেন, থারুরের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে ‘আরও একটি ফতোয়া’ জারি হতে পারে।

পুনাওয়ালা বলেন, ‘এটা আসলে কংগ্রেসের দেশে এক বার্তা—জরুরি অবস্থার মানসিকতা থেকে বের হয়ে একটি পরিণত বিরোধী দলের মতো আচরণ করা উচিত। কিন্তু রাহুল গান্ধী কি বার্তাটি বুঝবেন? বরং ড. থারুরের বিরুদ্ধে নতুন আরেকটি ফতোয়া জারি হতে পারে।’

কয়েক মাস ধরে কংগ্রেসের ভেতরে মতবিরোধের অন্যতম কণ্ঠ হয়ে উঠেছেন শশী থারুর। তিনি অতীতে বিজেপি নেতা এল কে আদবানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রশংসা করায় দলের ভেতর থেকেও সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

দুই দিন আগে তিনি রামনাথ গোয়েঙ্কা লেকচারে মোদির দেওয়া ভাষণের প্রশংসা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কংগ্রেসের এক নেতা প্রশ্ন তোলেন—‘শশী থারুরের কাছে যদি মোদি এতই ভালো, তবে তিনি কংগ্রেসে আছেন কেন?’

সম্প্রতি থারুর ভারতে বংশপরম্পরার রাজনীতি নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন। সেখানে তিনি মেধাতন্ত্র বা যোগ্য নেতা হওয়ার পথে বাধা হিসেবে গান্ধী-নেহরু পরিবারের উল্লেখ করেন।

হাদির খুনিদের দুই সাহায্যকারীকে আটকের দাবি নাকচ করল মেঘালয় পুলিশ

ধর্ষণের শিকার নারীকে বিজেপি নেত্রীর স্বামী বললেন, ‘আমার কিছুই হবে না’

বেঙ্গালুরুতে ‘বুলডোজার রাজ’: ৪০০ মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ, তোপের মুখে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ফের উদ্বেগ জানাল ভারত

আতঙ্ক ও উত্তেজনার মধ্যে ভারতে বড়দিন ‘উদ্‌যাপন’

ওডিশায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম তরুণকে ‘বাংলাদেশি’ বলে পিটিয়ে হত্যা

‘বাংলাদেশি’ তকমায় এক বছরে ২২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারত

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে