কিছুক্ষণের জন্য যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল ভয়াবহ খবর—গণপতি বিসর্জনের দিন শহরজুড়ে বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটবে। বলা হচ্ছিল, ৪০০ কেজি আরডিএক্স বিস্ফোরক মজুত রয়েছে, ৩৪টি গাড়িতে মানববোমা প্রস্তুত আর ঢুকে পড়েছে ১৪ ‘পাকিস্তানি জঙ্গি’। আতঙ্কের বার্তা ছড়িয়ে পড়তেই ভারতের এই বাণিজ্য নগরী যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হলো। সর্বত্র চেকপোস্ট, টহলদারি, তল্লাশি আর কড়া নিরাপত্তা।
অবশেষে জানা গেল, পুরো ঘটনাটাই ভুয়া। আতঙ্ক ছড়ানোর নেপথ্যে অশ্বিনী কুমার নামের এক কথিত জ্যোতিষী। বয়স পঞ্চাশের ওপরে। পাটনার বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন ধরে থাকেন নয়ডায়। আর এই ভয়াবহ নাটক সাজিয়েছিলেন শুধু ব্যক্তিগত প্রতিশোধের কারণে।
অশ্বিনী কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক বছর আগে এক বন্ধুর সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। সেই বন্ধু তাঁর নামে মামলা করেছিলেন, এমনকি জেলও খাটতে হয়েছিল অশ্বিনীকে। এরপর প্রতিশোধের নেশায় তিনি নামলেন বিপজ্জনক খেলায়—বন্ধুর নাম ভাঙিয়ে মুম্বাই পুলিশের কাছে পাঠান সন্ত্রাসী হামলার হুমকি।
হুমকির বার্তাটি পাঠানো হয়েছিল মুম্বাই ট্রাফিক পুলিশের অফিশিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। এ কারণে বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়ে যায় অনেকটা। সাধারণত এ ধরনের সরকারি গ্রুপে ভুয়া বার্তা আসা কঠিন। বার্তায় তথ্য দেওয়া হয়েছিল খুবই পরিকল্পিতভাবে—সংখ্যা, জায়গা, অস্ত্র, এমনকি সন্ত্রাসী সংগঠনের নামও উল্লেখ ছিল। এসব আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে তোলে।
অশ্বিনীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার নথিতে বলা হয়েছে, অশ্বিনীর মূল কৌশল ছিল তাঁর বন্ধুকে জড়ানো। তাই বার্তায় জঙ্গিগোষ্ঠীর নামের সঙ্গে বন্ধুর ফোন নম্বর জুড়ে দেন তিনি। পুলিশের ধারণা, পরিকল্পনা সফল হলে বন্ধুই ধরা পড়তেন। কিন্তু প্রযুক্তির জালে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে গেলেন তিনিই।
তদন্তকারীরা নয়ডার একটি মুদিদোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে অশ্বিনীকে শনাক্ত করে। ধরা পড়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে আসল কাহিনি। এটি নিছক ব্যক্তিগত প্রতিশোধের নাটক ছিল। তিনি ভেবেছিলেন, এত বড় শহরে ভয় ছড়িয়ে সহজেই ফাঁসানো যাবে পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে। কিন্তু যে ভীতি ছড়িয়েছে, সেটি মাপার উপায় নেই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে আরও কঠোর নজরদারি দরকার। কারণ, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে দেওয়া ভুয়া হুমকি শুধু প্রশাসনকে ব্যস্ত রাখে না, সাধারণ মানুষের মনেও দীর্ঘস্থায়ী ভয়ের ছাপ ফেলে যায়।