ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশ সংলগ্ন রাজ্য আসামে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে কেন্দ্র ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আসামের করিমগঞ্জ জেলায়—যেটির বর্তমান নাম শ্রীভূমি—কংগ্রেসের এক দলীয় আয়োজনে এক নেতাকে ‘আমার সোনার বাংলা’ গান গাইতে শোনা যায়। এই ঘটনার পর বিজেপি বলেছে, কংগ্রেস ‘বাংলাদেশ নিয়ে সব সময় ঘোরের মধ্যে থাকে।’
এই ঘটনার পর বিজেপি বিপুল রাজনৈতিক আক্রমণ শানালেও মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন। ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন ১৯০৫ সালে, প্রথম বঙ্গবিভাজনের প্রতিবাদে। এই উদ্যোগ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ সৃষ্টি করেছিল এবং ১৯১১ সালে বিভাজন বাতিল করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালে এটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করে।
আমার সোনার বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বঙ্গের মানুষের তার ভূমির সঙ্গে গভীর সংযোগের কথা বর্ণনা করেছেন। সীমান্তের দুই পাশে থাকা বাংলাভাষীরা অনুষ্ঠান বা ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে এই গান প্রায়ই গায়। এমনকি ভারতের বিভিন্ন স্থানে, যেমন দিল্লিতে, বাংলার খাবারের রেস্তোরাঁর নাম ‘আমার সোনার বাংলা’ রাখা হয়েছে।
আসামে শ্রীভূমি জেলা বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত এবং এটি বাংলাভাষা–প্রধান বরাক উপত্যকার অংশ। তাই সেখানে এই গান গাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কংগ্রেস এখনো বিজেপির সমালোচনার জবাব দেয়নি।
তবে বিজেপি ভিডিওটি তুলে ধরে কংগ্রেসকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছে। বিজেপি আসাম ইউনিট এক্সে লিখেছে, ‘চিহ্নগুলো স্পষ্ট। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সাহস দেখিয়ে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছিল যা পুরো উত্তর-পূর্বকে দেখাচ্ছে এবং এখন বাংলাদেশ নিয়ে ঘোরের মধ্যে থাকা কংগ্রেস গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এখানে, এই আসামে গাইছে। এরপরও যদি কেউ উদ্দেশ্যটি দেখতে না পারে, তারা হয় অন্ধ, বা সহমর্মী, বা উভয়ই।’
অসমের মন্ত্রী অশোক সিংহাল লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত—আমার সোনার বাংলা—কংগ্রেসের সভায় শ্রীভূমি, অসমে গাওয়া হয়েছে। অথচ, সেই একই দেশ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভারত থেকে আলাদা করতে চায়!’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এবার স্পষ্ট হলো, কেন কংগ্রেস দশকের পর দশক ধরে আসামে অবৈধ মিয়া (বাংলাভাষী মুসলিমদের তুচ্ছার্থে মিঞা/মিয়া বলে থাকে অসমীয়রা) অনুপ্রবেশকে উৎসাহিত করেছে। তারা ভোটব্যাংক রাজনীতির জন্য রাজ্যের জনসংখ্যার কাঠামো পরিবর্তন করে “বৃহত্তর বাংলাদেশ” তৈরি করতে চায়।’