বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। এই নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে আলিনগর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোদিভক্ত জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী মৈথিলী ঠাকুর। সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, ২৫ বছর বয়সী মৈথিলী ঠাকুর বিপুল ভোটে এগিয়ে আছেন এবং তিনি রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক (এমএলএ) হতে চলেছেন।
মৈথিলীর এমন খ্যাতির যাত্রা শুরু হয়েছিল অনেক আগে—মাত্র ছয় বছর বয়সে। সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করা মৈথিলী তাঁর দাদা ও বাবার কাছে লোকসংগীত, হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত, হারমোনিয়াম ও তবলায় প্রশিক্ষণ নেন।
পরে মেয়ের ব্যতিক্রমী প্রতিভা দেখে বাবা তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে আসেন। ১০ বছর বয়সে মৈথিলী দিল্লির দ্বারকায় জাগরণ ও বিভিন্ন সংগীত অনুষ্ঠানে পরিবেশনা শুরু করেন।
১১ বছর বয়সে তিনি ‘সা রে গা মা পা লিটল চ্যাম্পস’-এ অংশ নেন। ১৫ বছর বয়সে সনি টিভিতে ‘ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়র’-এ প্রতিযোগিতা করেন। এক বছর পর, ১৬ বছর বয়সে, তিনি ‘আই জিনিয়াস ইয়াং সিঙ্গিং স্টার’ প্রতিযোগিতা জেতেন। পরে তিনি ‘রাইজিং স্টার’-এ অংশ নেন এবং মাত্র দুই ভোটের ব্যবধানে রানার্সআপ হন।
সামাজিক মাধ্যমের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে মৈথিলীর জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকে। ফেসবুক ও ইউটিউবে তাঁর মিউজিক ভিডিওগুলো ভাইরাল হয় এবং তিনি একটি ডিজিটাল ফ্যানবেজ তৈরি করেন। দুই ভাইয়ের সঙ্গে সংগীত পরিবেশন করে তিনি অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন।
বিহারের মধুবনী জেলার এই শিল্পী ও তাঁর দুই ভাইকে ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক মধুবনীর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ভারত সরকার তাঁকে ‘অটল মিথিলা’ সম্মান দেয়। ২০২১ সালে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর তাঁকে ‘লোকমত সুর জ্যোৎস্না জাতীয় সংগীত পুরস্কারে’ ভূষিত করেন।
দুই ভাই ঋষভ ও আয়াচির সঙ্গে তুলসীদাসের রাম চরিতমানস এবং ভগবান রাম ও সীতাকে উৎসর্গ করা মৈথিলী লোকসংগীত পরিবেশন শুরু করার পর তাঁর খ্যাতি আরও বাড়ে। মধুবনী শিল্পকলার থিম ও মোটিফ তাঁর পরিবেশনায় যুক্ত করে এই শিল্পের প্রচারেও তিনি অবদান রাখেন।
২৫ বছর বয়সে মৈথিলী রাজনীতিতে পা রাখেন। গত ১৪ অক্টোবর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন এবং আলিনগর বিধানসভা আসনের টিকিট পান। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেলা ৩টা পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন মৈথিলী।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মৈথিলী বলেছেন, ‘এটি আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। মানুষ আমার ওপর এত আস্থা রেখেছে। একজন বিধায়ক হিসেবে এটি আমার প্রথম মেয়াদ হবে এবং আমি নির্বাচনী এলাকার জন্য আমার সেরাটা দেব।’
মৈথিলী এই আসনে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) বিনোদ মিশ্র ও জন সুরাজ পার্টির বিপ্লব কুমার চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি জিতলে বিহার বিধানসভায় নির্বাচিত সর্বকনিষ্ঠ প্রতিনিধি হবেন।
এদিকে, তাঁর বিজয় আলিনগরে বিজেপির প্রথম জয় হবে। মৈথিলীর প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে—স্কুলে পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যকলাপ হিসেবে মিথিলা চিত্রকলার প্রবর্তন, আলিনগরের নাম পরিবর্তন করে সীতানগর রাখা এবং মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করা।
আলিনগর আসনে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ, মুসলিম, যাদব (যদুর বংশধর) এবং পিছিয়ে পড়া মাল্লাহ ও পাসোয়ান জনগোষ্ঠী রয়েছে। ২০১০ ও ২০১৫ সালে আরজেডির আব্দুল বারি সিদ্দিকী এবং ২০২০ সালে বিকাশশীল ইনসান পার্টির (ভিআইপি) মিশরি লাল যাদবের জয়ের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সাল থেকে আসনটি মহাগাঠবন্ধনের (এমজিবি) ঘাঁটি ছিল। তবে এবার সেটি বিজেপির হাতে চলে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর বিহার বিধানসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এরপর দুই দফায় ৬ ও ১১ নভেম্বর ভোট হয়। আজ শুক্রবার ভোট গণনা চলছে।