বিহারকে ভারতীয় রাজনীতির পরীক্ষাগার বলে মনে করেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। আর সেই রাজ্যে শুরু হয়েছে ভোটযুদ্ধ—ব্যাটল ফর বিহার। মর্যাদার লড়াইয়ে রাজ্যের ২৪৩টি আসনের অর্ধেক, অর্থাৎ ১২১ আসনের ভোট আজ বুধবার প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ জোট আবারও ক্ষমতায় ফেরার আশা করছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের আহ্বান জানিয়েছেন গণতন্ত্রের এই উৎসবে উৎসাহ নিয়ে অংশ নিতে। তিনি বলেছেন, ‘যারা প্রথমবার ভোট দিচ্ছে, বিশেষ করে আমার তরুণ বন্ধুরা—মনে রাখবে, আগে ভোট, পরে নাশতা।’
অন্যদিকে বিরোধী ‘গ্র্যান্ড অ্যালায়েন্স বা মহাগাঠবন্ধন’ সরকারবিরোধী মনোভাব ও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদবের প্রতিশ্রুত ‘প্রতিটি ঘরে চাকরি’ পরিকল্পনার ওপর ভরসা করে এনডিএকে হারানোর আশা করছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে রাজ্যের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে উঠে আসা আরজেডি এবারও তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে আগ্রাসী প্রচারণা চালিয়েছে। তরুণ ভোটারদের টানাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
বিজেপি এবারও জাঁকজমকপূর্ণ প্রচার চালিয়েছে। মোদি নিজে, তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এতে অংশ নিয়েছেন। তবে প্রচারের শেষ দিকে এনডিএ শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে অনিশ্চয়তার গুঞ্জন ছড়ায়। অনেকে ধরে নেন, ছয়বার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ৭৪ বছর বয়সী নিতীশ কুমারকে এবার সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। কারণ, তাঁর দল জেডিইউ এখন বিজেপির ছায়ায় আসলে অবস্থান করছে দ্বিতীয় সারিতে। শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা বিষয়টি পরিষ্কার করেন।
অন্যদিকে কংগ্রেসের প্রচারণা ছিল অনেকটা নিরুত্তাপ। ২০২০ সালে তারা জোটসঙ্গী রাষ্ট্রীয় জনতা দল–আরজেডির তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। এবারের প্রচার শুরুতে রাহুল গান্ধী ও তেজস্বী যাদবের যৌথ পদযাত্রায় গতি এলেও রাহুল প্রায় দুই মাস প্রচারে অনুপস্থিত ছিলেন। এর প্রভাব পড়ে আসন বণ্টনের আলোচনাতেও। ফলে এখন অন্তত ১২টির বেশি আসনে কংগ্রেস ও আরজেডি মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছে, যা বিরোধী ভোট বিভক্তির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এদিকে নির্বাচনে ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ হিসেবে দেখা হচ্ছে নির্বাচনী কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোরকে। তাঁর দল জন সুরাজ পার্টি রাজনীতির ময়দানে নতুন চমক এনেছে। তিনি ঘোষণা করেছেন, তাঁদের দল হয় ১০ টিরও কম আসন পাবে, নয়তো ১৫০ টিরও বেশি। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে বা পরে কোনো জোটে তাঁরা যোগ দেবে না। রাজ্যের সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে জন সুরাজ এবং দুর্নীতি ও মৌলিক সেবার অবনতিকে প্রধান ইস্যু করেছে।
নির্বাচনের মূল বিষয়গুলো ঘুরছে জীবিকা, বেকারত্ব, অভিবাসন, দুর্নীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাকে ঘিরে। তেজস্বী যাদবের প্রতিশ্রুতি—রাজ্যের প্রতিটি ঘরে একটি করে সরকারি চাকরি—রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। এই প্রতিশ্রুতির মানে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ চাকরি।
এনডিএর দাবি, রাজ্যের আর্থিক অবস্থা এত বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মতো নয়। তাদের প্রতিশ্রুতি—১ কোটি চাকরি সৃষ্টি ও নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা, যার লক্ষ্য ১ কোটি নারী লাখপতি গড়ে তোলা।
আজ যে আসনগুলোতে ভোট হচ্ছে, সেগুলোর বেশির ভাগই মধ্য বিহার অঞ্চলে। ২০২০ সালের নির্বাচনে এই অঞ্চলেই মহাগাঠবন্ধন জোট ভালো ফল করেছিল—১২১টি আসনের মধ্যে ৬৩ টিতে জয় পেয়েছিল তারা। বিজেপি ও নিতীশ কুমারের জেডিইউ মিলে পেয়েছিল ৫৫টি আসন।