ভারতের আসামের চরাইদেউ জেলার টিঙালিবামে কালীমন্দিরের পাশের একটি নালা থেকে গত সোমবার (২৩ আগস্ট) এক শিশুর মাথাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় মানুষের সন্দেহ, শিশুটিকে বলি দেওয়া হয়েছে। নরবলির অভিযোগকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আগস্ট মাসেই আসাম রাজ্যের চরাইদেউ জেলায় দুটি শিশু বলির ঘটনা ঘটেছে। শিশু বলির পাশাপাশি ডাইনি সন্দেহে হত্যার ঘটনা নিয়েও সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ বাড়ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে ওই শিশুকে বলি দেওয়া হয়েছে বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। কেননা মরদেহের পাশ থেকে তন্ত্র সাধনার উপকরণ পাওয়া গেছে।
একই জেলাতে গত ১০ আগস্ট সাফ্রাই চা বাগানের সিংলু নদীর চর থেকে লাল শাড়ি পরা, ছাইমাখানো মাথাকাটা শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেই শিশুর মরদেহের পাশ থেকেও তন্ত্র সাধনা উপকরণ পাওয়া যায়।
জানা গেছে, চা বাগান বা উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন কুসংস্কারের কারণে এ ধরনের মধ্যযুগীয় বর্বরতার ঘটনা ঘটছে। সরকারের পক্ষ থেকে সচেতনতার জন্য প্রচার চালানো হলেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৯ জুন গৌহাটির বিখ্যাত কামাক্ষা মন্দিরের কাছ থেকে চল্লিশ বছর বয়সী এক নারীর মাথাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশে পূজার সামগ্রী ও মাটির প্রদীপ দেখে তখনো নরবলির অভিযোগ ওঠে। এই রাজ্যেরই উদালগুড়ি জেলার গণকপাড়ায় ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই নিজের তিন বছরের শিশুকে বলি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন স্থানীয় শিক্ষক যাদব সহরিয়া ও তান্ত্রিক রমেশ সহরিয়া। শিশুটিকে হাঁড়িকাঠে ঢুকিয়ে উলঙ্গ নৃত্যে মেতে উঠেছিল তাঁরা।
সেই সময় স্থানীয় মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পরে পুলিশ এসে গুলি চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে। আসামে এ ধরনের মধ্যযুগীয় বর্বরতা বন্ধ হয়নি। ২০১৫ সালে রাজ্য সরকার এ ধরনের বর্বরতা থেকে মানুষকে বাঁচাতেকড়া আইন তৈরি করে।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পর্যন্ত ডাইনি সন্দেহে ১০৭ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কুসংস্কার রোধে সঠিক সরকারি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাবকেই দায়ী করছে কংগ্রেস।
কংগ্রেস নেতা পার্থরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বিজেপি সরকারে থাকায় মানুষের মধ্যে কুসংস্কার আরও বাড়ছে। এ ধরনের জঘন্য অপরাধ বন্ধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজ্য নাগরিক অধিকার সমন্বয় সমিতির নেতা সাধন পুরকায়স্থ বলেন, সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করতে চাই সঠিক সরকারি পরিকল্পনা। শুধু প্রচারের নামে অর্থ খরচ করে লাভ নেই। মানুষের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছাতে হবে।
বিজেপির পক্ষ থেকেও এ ধরনের কুসংস্কারের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। বিজেপির প্রবীণ নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থের মতে, সমাজ থেকে অন্ধ কুসংস্কার দূর করতে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।