হোম > বিশ্ব > ভারত

গরু নিয়ে ‘হিন্দুত্ববাদী’ রাজনীতি পৌঁছে গেছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে!

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ছবি: সিএনএন

ভারতের অন্যতম সম্মানজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একাডেমিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ উঠেছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একই দিনে একটি গণতন্ত্র বিষয়ক সেমিনার বাতিল করে গরুর কল্যাণবিষয়ক একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা পাঠিয়েছে। এই দুই সিদ্ধান্ত পাশাপাশি আসায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

হিন্দু সংস্কৃতিতে গরু পবিত্র হলেও সমালোচকদের অভিযোগ—নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার গরুর প্রতি এই ভক্তিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে আরও জোরালো করাই এর উদ্দেশ্য। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মনে করেন, এই নির্দেশনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারি চাপ বাড়ার আরেকটি দৃষ্টান্ত।

রোববার (১৬ নভেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জমি, সম্পদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে চলা লেকচার সিরিজের অংশ ছিল এই সেমিনার। কিন্তু তা বাতিল করে একই দিনে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের ‘জাতীয় গরু সম্মেলন’-এ অংশ নিতে নির্দেশনা পাঠান ডিন অব কলেজেস বলরাম পানি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে সুস্পষ্ট আদর্শিক দমন-পীড়ন হিসেবে অভিহিত করেছেন সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক নন্দিনী সুন্দর। তিনি বাতিল হওয়া গণতন্ত্র বিষয়ক সেমিনারটির সমন্বয়কারী ছিলেন। তাঁর অভিযোগ—সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমালোচনামূলক চিন্তা এবং বৈচিত্র্যময় একাডেমিক আলোচনা নষ্ট করছে। তিনি বলেন, ‘তারা শুধু হিন্দুত্ববাদী চিন্তাকেই জায়গা দিতে চায়।’

ডেমোক্রেটিক টিচার্স ফ্রন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, গণতন্ত্র বিষয়ক একাডেমিক সেমিনার বাতিল করে গরুর কল্যাণ সংক্রান্ত সম্মেলনকে প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেশের বৈজ্ঞানিক মনন ও গবেষণার ধারাবাহিকতাকে আঘাত করেছে।

অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করেছে—আগে অনুমতি না নেওয়ার কারণেই গণতন্ত্র বিষয়ক সেমিনারটি বাতিল করা হয়েছে।

তবে এই যুক্তির বিরোধিতা করে নন্দিনী সুন্দর দাবি করেছেন, গত ৬০ বছরে এই ধরনের সেমিনারের জন্য কখনো আলাদা অনুমতির প্রয়োজন হয়নি, অন্যান্য বিভাগেও তা নেওয়া হয় না। ঘটনাটির প্রতিবাদে শেষ পর্যন্ত সমন্বয়কারীর পদ থেকে ইস্তফা দেন নন্দিনী।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিরোধী জাতীয়তাবাদী’ তকমা দিয়ে অভিযুক্ত করেছে ভারতের মোদি সরকার। তবে বহু শিক্ষাবিদ অভিযোগ করেছেন—সরকার নিযুক্ত প্রশাসন পাঠ্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছে, কিছু বই নিষিদ্ধ করা হচ্ছে এবং গণতন্ত্র বা মতপ্রকাশ নিয়ে সেমিনারগুলোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

গবেষক ও ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ—সরকারের সমালোচনামূলক গবেষণা করলে দ্রুত প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একজন পিএইচডি গবেষক জানান, ডানপন্থী রাজনীতির উত্থান নিয়ে গবেষণা করতে চাইলেও তাঁকে বিষয় বদলাতে বাধ্য করা হয়েছে।

গরুকে জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা বিজেপির দীর্ঘদিনের রাজনীতির অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকটি রাজ্যে গরু জবাই বিরোধী কঠোর আইন হয়েছে। একই সঙ্গে ভিন্নধর্মী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গোরক্ষকদের সহিংসতার ঘটনাও বেড়েছে।

নন্দিনী সুন্দর বলেন, ‘ভারতের বহু উৎকৃষ্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকি যে অল্প কয়েকটি অবশিষ্ট আছে, সেগুলোও ধ্বংসের পথে।’

হাদির খুনিদের দুই সাহায্যকারীকে আটকের দাবি নাকচ করল মেঘালয় পুলিশ

ধর্ষণের শিকার নারীকে বিজেপি নেত্রীর স্বামী বললেন, ‘আমার কিছুই হবে না’

বেঙ্গালুরুতে ‘বুলডোজার রাজ’: ৪০০ মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ, তোপের মুখে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ফের উদ্বেগ জানাল ভারত

আতঙ্ক ও উত্তেজনার মধ্যে ভারতে বড়দিন ‘উদ্‌যাপন’

ওডিশায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম তরুণকে ‘বাংলাদেশি’ বলে পিটিয়ে হত্যা

‘বাংলাদেশি’ তকমায় এক বছরে ২২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারত

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে