প্রায় দুই দশক আগে পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাসাগর মেলা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মধ্যপ্রদেশের এক বৃদ্ধাকে বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গ রেডিও ক্লাবের (ডব্লিউবিআরসি) অপেশাদার হ্যাম রেডিও অপারেটরদের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে তাঁকে ভারতে ফিরিয়ে এনে পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের জোরদার প্রচেষ্টা চলছে।
ডব্লিউবিআরসির সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে এই রেডিও ক্লাবের পরিচিতদের মাধ্যমে ৭০ বছর বয়সী ওই নারীর সন্ধান মিলেছে। রাধিকা নামে ওই বৃদ্ধা রাস্তার ভিক্ষা করছিলেন। তাঁর স্বামীর নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। কেবল একটি শব্দই তিনি বারবার উচ্চারণ করছিলেন—‘সাগর’।
এই সূত্র ধরে ডব্লিউবিআরসি প্রথমে সাগরদ্বীপ অঞ্চলে খোঁজ শুরু করে। কিন্তু সেখানে কোনো তথ্য না পাওয়ায় তারা অনুসন্ধানের পরিধি বাড়িয়ে দেয়। এরপর তারা ভারতে ‘সাগর’ নামের অন্যান্য স্থানগুলোতে খোঁজ নিতে শুরু করলে জানতে পারে, মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার খাজরা গ্রামের এক নারী তীর্থযাত্রার সময় গঙ্গাসাগর থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন।
নাগ বিশ্বাস বলেন, রাধিকা তীর্থযাত্রীদের একটি দলের সঙ্গে গঙ্গাসাগরে গিয়েছিলেন। কোনোভাবে তিনি সেই দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং ভুলবশত বাংলাদেশের তীর্থযাত্রীদের আরেকটি দলের সঙ্গে যোগ দেন। সেই সময়ে বাংলাদেশের তীর্থযাত্রীরা ট্রলারে করে সাগরদ্বীপে আসতেন। রাধিকা সম্ভবত সেই ট্রলারগুলোর কোনো একটিতে উঠে বাংলাদেশে পৌঁছে যান। সেখানে অসহায় অবস্থায় তিনি ভিক্ষাবৃত্তিকেই অবলম্বন করেন।
নিখোঁজ হওয়ার সময় রাধিকার স্বামী বলীরাম এবং তিন ছেলে ছিল। দুঃখের বিষয় হলো, তাঁর স্বামী এবং এক ছেলে (পূরণ) ইতিমধ্যে মারা গেছেন। বাকি দুই ছেলে রাজেশ ও গণেশ বর্তমানে দিল্লিতে কাজ করেন।
রাধিকা এত বছর রাস্তায় ভিক্ষুকের বেশে থাকার কারণে অপরিষ্কার ও বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে যাওয়ায় শুরুতে আগের চেহারার সঙ্গে বর্তমান চেহারার কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছিল না।
অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা রাধিকাকে একটি পারলারে পাঠিয়ে পরিষ্কার করাই এবং নতুন পোশাক দিই। এরপর যখন আমরা তাঁর নতুন ছবি ছেলে রাজেশকে পাঠাই, তখন তিনি তৎক্ষণাৎ মাকে চিনতে পারেন।’
এই ঘটনায় ছেলে রাজেশ, তাঁর ভাই এবং খাজরা গ্রামের বাসিন্দারা অবাক ও আনন্দিত। রাধিকার ছেলে রাজেশ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমার মা তীর্থযাত্রায় গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর ফিরে আসা আমার জন্য তীর্থযাত্রার চেয়ে কোনো অংশে কম হবে না। আমি তাঁর মধ্যে ঈশ্বরকে দেখব।’
ডব্লিউবিআরসি গঙ্গাসাগর মেলা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছে এবং তারা সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। উভয় পক্ষই দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, রাধিকা শিগগির তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন।