ভারতের উত্তর প্রদেশের আমেথির এক গ্রামে মজুরি চাওয়ায় এক দলিত কৃষি শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করেছে এক ধনী জমিদার ও তার সহযোগীরা। গতকাল রোববার এমন অভিযোগ তুলেছেন নিহতের পরিবার। নিহতের নাম হৌসিলা প্রসাদ। তবে ঘটনা অক্টোবরে দ্বিতীয় সপ্তাহের এবং ঘটেছে উত্তর প্রদেশের রামবারি মজারে সরাই মহেশা গ্রামে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বলা হয়েছে, হৌসিলা প্রসাদের মৃত্যু ঘটল এমন এক সময়, যখন এর আগে পাশের রায়বেরেলিতে গত ১ অক্টোবর রাতে এক দলিতকে ‘ড্রোন চোর’ সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। আমেথি ও রায়বেরেলি—দুটোই নেহরু-গান্ধী পরিবারের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
এই ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত উচ্চবর্ণের জমিদার শুভম সিংকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, হামলায় ৪ জন জড়িত থাকলেও পুলিশের এজাহারে কেবল একজনের নাম আছে। তাদের আরও অভিযোগ, শুভমের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃত খুনের’ মামলা না দিয়ে শুধু ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের’ ধারা ব্যবহার করেছে পুলিশ।
নিহতের স্ত্রী কীর্তি জানান, ৪০ বছর বয়সী হৌসিলা প্রসাদকে ‘শুভম সিং এবং তাঁর তিন আত্মীয় ও বন্ধুরা জোর করে তাদের জমিতে কাজ করতে নিয়ে গিয়েছিল।’ কীর্তি বলেন, তাঁর স্বামী এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৩৫০ রুপি মজুরিতে কাজ করেছিলেন। কিন্তু কাজ শেষে টাকা দেওয়া হয়নি।
কীর্তি আরও বলেন, ‘২৬ অক্টোবর তিনি বকেয়া টাকা চাইতে গেলে ওরা লোহার রড দিয়ে তাঁকে মারধর করে। অজ্ঞান হয়ে পড়লে তারা জিপে করে বাড়ির সামনে এনে ফেলে চলে যায়।’ মাথায় গুরুতর আঘাতসহ নানা জখম নিয়ে হৌসিলা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে থাকেন। পরে তাঁকে লক্ষ্ণৌয়ের কিং জর্জ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে নেওয়া হয়। সেখানে রোববার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
উত্তর প্রদেশ পুলিশের সার্কেল অফিসার দিনেশ কুমার মিশ্র জানান, শুভম সিংকে ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
নিহতের এক আত্মীয় মনীশ প্রসাদ বলেন, ‘আমরা মরদেহ নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান ধর্মঘট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের হুমকি দেয় এবং দ্রুত দাহ সম্পন্ন করতে বাধ্য করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে পুলিশ ঘটনাটিকে ছোটখাটো মারামারি বলে চালিয়ে দেয়। পরে কেবল একজনের নামে অবহেলাজনিত হত্যার মামলা করে। অথচ গোটা গ্রাম জানে, অন্তত চারজন মিলে হৌসিলা প্রসাদকে মেরেছিল।’
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তিন দিন পর পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তখন অভিযোগ ‘অবহেলাজনিত হত্যা’ থেকে বাড়িয়ে ‘ইচ্ছাকৃত খুন’-এ রূপ দেওয়া হয়, বিশেষ করে খবরটি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর।
উত্তর প্রদেশের অন্য জায়গা থেকেও দলিতদের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। লক্ষ্ণৌয়ের কাকরি এলাকার শীতলা মাতা মন্দিরে ৬৫ বছর বয়সী রামপালকে নিজের মূত্র চাটতে বাধ্য করা হয়। তিনি তখন প্রস্রাবনালির সংক্রমণে ভুগছিলেন। ঘটনাটি ঘটে ২০ অক্টোবর।