হোম > বিশ্ব > ভারত

তালেবান মন্ত্রীর সঙ্গে সরকারের আচরণ দেখে ‘লজ্জায় মাথা নত’ ভারতের বিশিষ্ট জনদের

কলকাতা প্রতিনিধি  

দিল্লিতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের রাজধানীতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সফর ঘিরে শুরু হয়েছে বিস্তর বিতর্ক। কারণ একদিকে এই সফরকে বলা হচ্ছে ‘কূটনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন’, অন্যদিকে দেশের বিশিষ্টজনদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন—বিশ্বের সবচেয়ে নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিকে এত উষ্ণ অভ্যর্থনা কেন দেওয়া হলো। এর মধ্যে বিশিষ্ট চিত্রনাট্যকার ও গীতিকার জাভেদ আখতার তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন—‘আমি লজ্জায় মাথা নিচু করি, যখন দেখি তালেবান প্রতিনিধিকে এমন সম্মান দেওয়া হচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে এই দেশই একসময় সন্ত্রাসবাদ রোধে মুখর ছিল।’ তাঁর এই বক্তব্য এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্র।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ ছাড়পত্রে ছয় দিনের ভারত সফরে পৌঁছান মুত্তাকি। বিশেষ ছাড়পত্র দেওয়ার কারণ হলো, ২০০১ সাল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। এই নিষেধাজ্ঞার অধীনে তাঁর ভ্রমণ, সম্পদ ও অস্ত্র কেনাবেচায় কড়া বিধিনিষেধ ছিল। এবার প্রথমবারের মতো সেই নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে কূটনৈতিক পরামর্শ বিনিময়ের স্বার্থে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে—এই কূটনীতি কি নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়?

বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা আনার জন্য ভারত বাস্তবতা মেনে চলেছে। সীমান্তপারের নিরাপত্তা, মধ্য এশিয়ার যোগাযোগ এবং আঞ্চলিক প্রভাব ধরে রাখতে কাবুলের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপ চালু রাখা জরুরি বলে মনে করছে নীতি–নির্ধারক মহল। তবু এই বাস্তবতার ভেতরেই উঠে আসছে মানবিকতার প্রশ্ন—যে শাসকগোষ্ঠী মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করেছে, সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করেছে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত মেলানো কতটা নৈতিক?

তালেবান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মুত্তাকি দিল্লিতে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কূটনীতিক এবং ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে সবচেয়ে বিতর্কিত হয়েছে তাঁর প্রথম সংবাদ সম্মেলন, যেখানে কোনো নারী সাংবাদিকদের প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিরোধী নেতারা একে ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘নারীর প্রতি অবমাননা’ বলে মন্তব্য করেন। প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনও বিষয়টির নিন্দা জানায়।

পরিস্থিতি সামলাতে গত রোববার (১২ অক্টোবর) মুত্তাকি আরেকটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন, যেখানে কয়েকজন নারী সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম বৈঠকটি হঠাৎ নির্ধারিত হয়েছিল, তালিকা তৈরি করতে ভুল হয়েছিল, এতে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।’ কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, ‘যাদের দেশে মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ, তাদের পক্ষ থেকে এই ব্যাখ্যা কেবল একটি ছদ্মবেশ।’

এদিকে তালেবানবিরোধী বুদ্ধিজীবী মহলে নতুন আরেকটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মুত্তাকিকে নিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাকেও তাঁরা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে দারুল উলুম দেওবন্দ মুত্তাকিকে যে সম্মান দিয়েছে, তা জাভেদ আখতারের ভাষায় ‘লজ্জার বিষয়’। তিনি বলেছেন, “দেওবন্দের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই ধরনের ‘ইসলামিক হিরোকে’ স্বাগত জানানো মানবতা ও শিক্ষার প্রতি আঘাত।”

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুত্তাকির সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন বা অতিথি বাছাইয়ে জড়িত ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সরকারের নীরবতা একপ্রকার সম্মতি নির্দেশ করছে। বিশেষ করে, যখন আন্তর্জাতিক মহল এখনো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি, তখন এমন সফর ভারতের ‘নৈতিক অবস্থান’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

ভারতের দক্ষিণ এশীয় বিশ্লেষকেরা বলছেন, কাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলে ভূরাজনীতির সমীকরণে ভারত পিছিয়ে পড়বে। চীন ও পাকিস্তান ইতিমধ্যে কাবুলে সক্রিয়, তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকতে এই সংলাপ কৌশলগতভাবে জরুরি। কিন্তু নাগরিক সমাজ মনে করছে, রাষ্ট্রীয় কৌশলের আড়ালে যদি মানবাধিকারবোধ উপেক্ষিত হয়, তবে সেই লাভ দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

একদিকে তালেবানের নিষ্ঠুর শাসন, অন্যদিকে বাস্তবতার কূটনীতি—এই দ্বৈততার মধ্যেই ভারতীয় সমাজ এখন নৈতিক সংকটে পড়েছে। এ অবস্থায় ‘কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ—কৌশল না মূল্যবোধ? ’ এই প্রশ্নটাই এখন জনমনে সবচেয়ে বেশি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জ্বালানি কিনতে পারলে, ভারত কেন পারবে না—প্রশ্ন পুতিনের

ইন্ডিগোতে ফ্লাইট বিপর্যয়: এক দিনে বাতিল ৫৫০-এর বেশি ফ্লাইট

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

অবশেষে ভারত পাচ্ছে রাশিয়ার যুদ্ধ সাবমেরিন, ২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হচ্ছে

পুতিনের নয়াদিল্লি সফর: ঐতিহাসিক কৌশলগত সম্পর্কের পুনর্নবায়ন নাকি কেবলই আনুষ্ঠানিকতা

রূপের ঈর্ষায় ৩ মেয়েশিশুকে চুবিয়ে হত্যা, দেখে ফেলায় রেহাই পায়নি নিজের ছেলে

স্মার্টফোনে সরকারি অ্যাপ: অ্যাপলের হুমকির পর পিছু হটল ভারত

কমান্ডো, স্নাইপারসহ পুতিনের জন্য ভারতের ৫ স্তরের নিরাপত্তাবলয়

দিল্লির বায়ুদূষণে দমবন্ধের জোগাড়: ৩ বছরে হাসপাতালে ভর্তি ২ লক্ষাধিক শ্বাসতন্ত্রের রোগী

সুপ্রিম কোর্টের চাপে সেই সোনালী ও তাঁর ছেলেকে ফেরত নিচ্ছে বিজেপি সরকার