দুই দশকের স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে করা একটি নতুন বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, ইউরোপের বিশাল জলসম্পদ শুকিয়ে যাচ্ছে এবং দক্ষিণ ও মধ্য ইউরোপজুড়ে—স্পেন ও ইতালি থেকে পোল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের কিছু অংশ পর্যন্ত মিষ্টি পানির মজুত কমছে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) গবেষকেরা ওয়াটারশেড ইনভেস্টিগেশনস ও দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে মিলে ২০০২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্যাটেলাইটের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রের পরিবর্তনগুলো এই স্যাটেলাইটগুলো ধরে রাখে।
পানি যেহেতু ভারী, তাই ভূগর্ভস্থ পানি, নদী, হ্রদ, মাটির আর্দ্রতা ও হিমবাহের পানির ওঠানামা মাধ্যাকর্ষণ সংকেতে ধরা পড়ে; যার ফলে স্যাটেলাইটগুলো কার্যকরভাবে কতটা পানি মজুত আছে তা মাপতে পারে।
এ গবেষণার ফলাফল একটি সুস্পষ্ট ভারসাম্যহীনতা প্রকাশ করে।
ইউরোপের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অংশ—বিশেষ করে স্ক্যান্ডিনেভিয়া, যুক্তরাজ্যের কিছু অংশ এবং পর্তুগাল আরও আর্দ্র হয়ে উঠছে। অন্যদিকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বের বিশাল অংশ, যার মধ্যে যুক্তরাজ্যের কিছু অংশ, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, রোমানিয়া ও ইউক্রেন রয়েছে, তা ক্রমশ শুষ্ক হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ডেটাতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয়ের প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
ইউসিএলের পানিসংকট ও ঝুঁকি হ্রাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুদ্দুহা বলেন, ‘যখন আমরা মোট ভূতলস্থ পানি মজুতের ডেটার সঙ্গে জলবায়ু-সংক্রান্ত ডেটাগুলোর তুলনা করি, তখন প্রবণতাগুলো একে অপরের সঙ্গে ব্যাপকভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়।’
শামসুদ্দুহা বলেন, যারা কার্বন নির্গমন কমানোর বিষয়ে এখনো সন্দিহান, সেই রাজনীতিবিদদের জন্য এটি ‘সতর্কবার্তা’ হওয়া উচিত।
ডক্টরাল গবেষক আরিফিন মোট ভূতলস্থ পানির ডেটা থেকে ভূগর্ভস্থ পানির মজুতকে আলাদা করে দেখেছেন এবং আবিষ্কার করেছেন, এই আরও স্থিতিস্থাপক জলাধারগুলোর প্রবণতা সামগ্রিক চিত্রের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে; যা নিশ্চিত করে ইউরোপের বেশির ভাগ লুকানো মিষ্টি জলের মজুত হ্রাস পাচ্ছে।
শামসুদ্দুহা বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের পশ্চিম অংশ আর্দ্র হচ্ছে যখন পূর্ব অংশ শুষ্ক হচ্ছে এবং এই সংকেত আরও শক্তিশালী হচ্ছে। যদিও মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্থিতিশীল থাকতে পারে বা সামান্য বাড়তে পারে; কিন্তু ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে ভারী বৃষ্টিপাত এবং দীর্ঘ শুষ্ক সময়কাল দেখছি।’
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান