কৃষ্ণ সাগরে রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ‘ভিরাট’-এ মানববিহীন সমুদ্রযান হামলা করেছে। আজ শনিবারের এই হামলায় সামান্য ক্ষতি হলেও জাহাজটি স্থিতিশীল রয়েছে। এর আগের দিন শুক্রবার রাতেও একই ট্যাংকারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল।
ইউক্রেন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে, বিষয়টি চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ট্যাংকারটির ক্রু একটি খোলা ফ্রিকোয়েন্সিতে পাঠানো উদ্ধার বার্তায় ‘ড্রোন হামলা’র কথা জানিয়েছে। তবে তারা এখানে মানববিহীন সামুদ্রিক ড্রোনকে বোঝাচ্ছিল। এক ভিডিওতে ক্রুদের বলতে শোনা যায়, ‘এটা ভিরাট। সাহায্য প্রয়োজন! ড্রোন আক্রমণ! মেইডে!’
তুরস্কের পরিবহন মন্ত্রণালয় এক্সে জানায়, ‘কৃষ্ণ সাগরের উপকূল থেকে প্রায় ৩৫ নটিক্যাল মাইল দূরে যেই ‘ভিরাট’কে মানববিহীন সামুদ্রিক যান আক্রমণ করেছিল, সেটিকে আজ (শনিবার) সকালে আবারও একই ধরনের যান আক্রমণ করেছে।’
পরিবহনমন্ত্রী আবদুলকাদির উরালোউলু বলেন, বহিরাগত কোনো আঘাত মানে জাহাজটি কোনো মাইন, রকেট, ড্রোন বা মানববিহীন জলযান দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এসব সম্ভাবনাই মাথায় আসে।
ভিরাট ট্যাংকারটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্থিতিশীল রয়েছে এবং ক্রুরাও সুস্থ আছে।
ইউক্রেনের দায় স্বীকার
এএফপি জানিয়েছে, রুশ ‘শ্যাডো ফ্লিট’ ট্যাংকারগুলোর ওপর এই হামলার পেছনে ইউক্রেন রয়েছে। এমন সময় এই অভিযোগ উঠল, যখন ওয়াশিংটন কিয়েভকে শান্তিচুক্তিতে সই করতে চাপ দিচ্ছে।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, ‘শ্যাডো ফ্লিট’ জাহাজগুলোতে হামলার যৌথ অভিযানটি পরিচালনা করেছে ইউক্রেনের এসবিইউ এবং নৌবাহিনী।
কর্মকর্তা বলেন, ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার পর দুই ট্যাংকারই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কার্যত সেবা থেকে বেরিয়ে গেছে। এতে রুশ তেল পরিবহনে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে।
ইউক্রেনের এসবিইউর একটি সূত্র এএফপিকে জানায়, হালনাগাদ করা ‘সি বেবি’ বা নৌ-ড্রোনগুলো সফলভাবে জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। তারা একটি ভিডিও শেয়ার করেছে, যাতে দেখা যায় ড্রোনগুলো ট্যাংকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এরপর বিস্ফোরণ ঘটছে।
ভেসেলফাইন্ডার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, উভয় ট্যাংকারই গাম্বিয়ার পতাকা বহন করছে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন। কারণ তারা ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর আরোপিত অবরোধ অমান্য করে রুশ বন্দরগুলো থেকে তেল পরিবহন করছিল।
ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার এই ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর বিরুদ্ধে আরও কঠোর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তাদের দাবি, বিপুল তেল রপ্তানির মাধ্যমেই রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যুদ্ধ চালানোর অর্থ জোগাড় করছে।
দ্য কিয়েভ ইনডিপেনডেন্টের তথ্য অনুযায়ী, হামলার শিকার জাহাজগুলোতে প্রায় ৭ কোটি ডলারের তেল থাকতে পারে।