যুদ্ধের মোড় যে কোনো সময় যে কোনো দিকে ঘুরে যেতে পারে। তবে বিষয়টি এভাবে হবে কল্পনাও ছিল না ইউক্রেনীয়দের। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে হঠাৎ করেই এখন সুবিধাজনক অবস্থানে আছে দেশটি। আর এটি সম্ভব হয়েছে রাশিয়ার এক সময়ের ভাড়াটে যোদ্ধার দল ওয়াগনার গ্রুপ দেশটির ভেতরে ঢুকে সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতের হুমকি দেওয়ায়।
শুক্রবার ২৫ হাজার অনুগত সেনা নিয়ে রাশিয়ার ভেরোনেজ শহর দখল করে নেন ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ঘটনাকে ‘সশস্ত্র বিদ্রোহ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে এ ঘটনা ইউক্রেনের জন্য যেন ঈশ্বরের আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। দেশটি কিছুদিন আগেই রাশিয়াকে প্রতিরোধের পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল।
ওয়াগনার গ্রুপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার খবরে ইউক্রেনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটিতে দেখা যাচ্ছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি টেলিভিশনের সামনে আরামদায়ক চেয়ারে বসে একটি বিয়ারের বোতল উন্মোচন করছেন। আর কোলের তুলে নিয়েছেন পপকর্ন ভর্তি একটি পাত্র। জেলেনস্কির খোশমেজাজের এই চিত্রটি আসলে তাঁর অভিনীত কোনো নাটক-সিনেমার অংশ। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ইউক্রেনের জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন তিনি।
সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন রাশিয়ায় ওয়াগনার গ্রুপ ঢুকে পড়ার খবরটি চাউর হয়, সেই মুহূর্তে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বাক্যে টুইট করে-‘আমরা দেখছি’।
বলা যায়, টানা ১৬ মাস ধরে তীব্র যুদ্ধের পর এমন কিছু ঘটল, যা নিরাপদ দূরত্বে থেকে দেখার সুযোগ পেল ইউক্রেন। কারণ তাদের ওপর আগ্রাসন চালানো শক্তিগুলো এখন একে অপরের হুমকি হয়ে গেছে।
ইউক্রেনের এখন যথার্থ শব্দটি হল-‘শ্যাডেনফ্রেউড’ বা অন্যের দুর্ভাগ্যের জন্য আনন্দ অনুভব করা।
চলতি মাসের শুরুতেই ইউক্রেন তার বহুল প্রত্যাশিত পাল্টা হামলা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, পাল্টা হামলায় অর্জন খুব কম হলেও এর মধ্য দিয়ে এখন পর্যন্ত তারা ৮টি ছোট গ্রাম ও ১১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা মুক্ত করেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক মত দিয়েছেন, আক্রমণটি তার মূল পর্বে প্রবেশের আগেই এটি ফল দিতে শুরু করেছে। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের সূচনা অবশেষে রাশিয়ান অভিজাতদের অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক টুইটে লিখেছেন-‘রাশিয়া যত বেশি সময় আমাদের ভূমিতে তার সৈন্য এবং ভাড়াটে সেনাদের রাখবে, তত বেশি বিশৃঙ্খলা, যন্ত্রণা এবং সমস্যায় পড়বে তারা নিজেরাই। আর এটি ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়েই চলবে।’