যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘এ’ লেভেলে অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা বেছে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এর পেছনে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘এ’ লেভেলে শীর্ষ পাঁচ জনপ্রিয় বিষয়ের মধ্যে উঠে এসেছে ব্যবসায় শিক্ষা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরীক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে একটি ‘উদ্যোক্তা মানসিকতা’ দেখা যাচ্ছে এবং তারা এমন বিষয়গুলো নির্বাচন করছে, যা তাদের কর্মজীবনের নতুন সুযোগ তৈরি করে দেবে। নতুন প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই বছর ‘এ’ লেভেলে অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা—উভয় বিষয়েই আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েছে।
একিউএ পরীক্ষা বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ক্লেয়ার থমসন বলেন, যে দুটি বিষয়ের জনপ্রিয়তা বেড়েছে, সে দুটি বিষয় বাস্তব জীবনের সঙ্গে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। পৃথিবী ও ব্যবসা-বাণিজ্য কীভাবে কাজ করে, তা বুঝতে সাহায্য করে এ বিষয়গুলো।
উল্লেখ্য, একিউএ যুক্তরাজ্যের একটি পরীক্ষা বোর্ড। এর পুরো নাম অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিফিকেশনস অ্যালায়েন্স। তারা স্কুল ও কলেজের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা যেমন জিসিএসই, এএস ও ‘এ’ লেভেল ও পেশাভিত্তিক নানা পরীক্ষা নেয়।
ক্লেয়ার আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, হঠাৎ করে এ বিষয় দুটির জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায়—তরুণ-তরুণীরা বা আরও সহজ করে বললে ইনফ্লুয়েন্সাররা প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন। সেটি দেখে শিক্ষার্থীরা অল্প বয়সেই অর্থ উপার্জনে উৎসাহিত হচ্ছে। উদ্যোক্তা দক্ষতা অর্জন করতে চাইছে, যা তাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখা সফল ব্যক্তিদের অনুকরণ করতে সাহায্য করবে।’
জেসিকিউ বোর্ডের চেয়ারওম্যান ও ওসিআর পরীক্ষা বোর্ডের প্রধান নির্বাহী জিল ডাফি বলেন, ‘বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহের বৃদ্ধি দেখে ভালো লাগছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি সত্যি যে, আমরা এই প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে একটি উদ্যোক্তা মানসিকতা দেখতে পাচ্ছি। এখনকার বেশির ভাগ তরুণেরই ছোটখাটো ব্যবসা থাকে।’
জেসিকিউ কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর ‘এ’ লেভেলে অর্থনীতির জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে এবং ব্যবসায় শিক্ষার ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ০ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। ব্যবসায় শিক্ষার শীর্ষ পাঁচে প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে বর্তমান গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এই প্রথম মানবিক শাখার কোনো বিষয় শীর্ষ পাঁচে নেই।
হারগ্রিভস ল্যান্সডাউন নামের এক ব্রিটিশ ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানির ব্যক্তিগত অর্থবিষয়ক প্রধান সারাহ কোলস্ বলেন, ‘এ’ লেভেলে কোন বিষয় নেবে, তার পেছনে অনেক কারণ থাকে। অনেক শিক্ষার্থী এমন বিষয় বেছে নেয়, যা ভবিষ্যতে তাদের পছন্দের চাকরি আর ভালো আয়ে সাহায্য করবে। তিনি আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা সফল বলে যাদের মনে করে, তাদেরই অনুসরণ করে। তারা উদ্যোক্তা ও ব্যবসায় মালিকদের সাফল্যের চূড়ায় দেখে, যারা একটি সমৃদ্ধ জীবন যাপন করছে। তাই অনেকে ব্যবসায় শিক্ষা বা অর্থনীতিকে সাফল্যের একটি সম্ভাব্য পথ হিসেবে বেছে নিচ্ছে।
তিনি আরও যোগ করেন, কিছু মানুষের জন্য এটি তাদের পছন্দের ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য মৌলিক বিষয়গুলো বোঝার একটি দারুণ সুযোগ। অন্যরা হয়তো মাঝপথে তাদের মন পরিবর্তন করবে, কিন্তু এ বিষয়গুলো থেকে অর্জিত বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা ও দক্ষতা তাদের ভবিষ্যতে যেকোনো কাজে সাহায্য করবে।