যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইউক্রেনের জন্য প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর মতো এক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার উল্লেখ আছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের হাতে পড়া খসড়া অনুযায়ী—এই নিশ্চয়তা রাশিয়া যদি ইউক্রেনে ফের কোনো হামলা চালায়, তা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের পুরো ‘ট্রান্সআটলান্টিক সম্প্রদায়ের’ ওপর আঘাত হিসেবে দেখতে বাধ্য করবে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে বড় ধরনের ছাড় দিতে বলছে। তবে এর সঙ্গে আছে এক নজিরবিহীন প্রতিশ্রুতি। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রধান লক্ষ্য ছিল—শক্তপোক্ত মার্কিন ও ইউরোপীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাওয়া। এবং প্রথমবার ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাব আলোচনার টেবিলে এল।
২৮ দফার পরিকল্পনাটি মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকল গতকাল বৃহস্পতিবার জেলেনস্কির কাছে উপস্থাপন করেন। সেখানে বলা আছে ‘ইউক্রেন নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাবে।’ কিন্তু সঙ্গে অন্য একটি খসড়া চুক্তিও ইউক্রেনকে দেওয়া হয়েছিল।
খসড়াটিতে বলা আছে, ভবিষ্যতে যদি রাশিয়া কোনো ‘গুরুত্বপূর্ণ, ইচ্ছাকৃত ও ধারাবাহিক সশস্ত্র হামলা’ চালায় এবং সেটা সমঝোতাকৃত যুদ্ধবিরতি রেখা অতিক্রম করে ইউক্রেন ভূখণ্ডে প্রবেশ করে, তাহলে সেটিকে ট্রান্সআটলান্টিক সম্প্রদায়ের শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর আঘাত হিসেবে ধরা হবে। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে। এর মধ্যে আছে সামরিক প্রতিক্রিয়া, গোয়েন্দা ও লজিস্টিক সহায়তা, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
দলিলটিতে স্বাক্ষরের জন্য জায়গা রাখা হয়েছে—ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো এবং রাশিয়ার জন্য। হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাশিয়াকে এই খসড়া সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়েছে। তবে ভ্লাদিমির পুতিন শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর করবেন কি না তা অনিশ্চিত।
নিরাপত্তা নিশ্চয়তার মেয়াদ প্রথমে নির্ধারিত হবে ১০ বছর। পরে পারস্পরিক সম্মতিতে নবায়ন করা যাবে। হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং পরিকল্পনাটির বিষয়ে প্রত্যক্ষ জ্ঞাত আরেকটি সূত্র নথির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবটি ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার ওপর নির্ভর করবে এবং চূড়ান্ত রূপ বদলে যেতে পারে। হোয়াইট হাউস এই প্রস্তাবকে জেলেনস্কি ও ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার জন্য ‘বড় জয়’ হিসেবে দেখছে।
জেলেনস্কির কাছে এখন এমন একটি প্রস্তাব রয়েছে যেখানে—তাঁকে রাশিয়ার অধিকারের থাকা অঞ্চলের চেয়েও বেশি অঞ্চল ছাড়তে হতে পারে। একই সঙ্গে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পূর্ণভাবে স্বাভাবিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে—নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে এবং যুদ্ধাপরাধ-সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে সাধারণ ক্ষমাও প্রযোজ্য হতে পারে। এসব শর্ত জেলেনস্কি ও ইউক্রেনকে রাজি করানো সহজ হবে না।
ট্রাম্পের বিশেষ দূত ও ২৮ দফা পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করা ব্যক্তি স্টিভ উইটকফ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে জেলেনস্কির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রুস্তেম উমেরভের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছেন। ওই খসড়া লিখিতভাবে জেলেনস্কির কাছে গতকাল বৃহস্পতিবার পৌঁছে দেওয়া হয়। হোয়াইট হাউস ও একই সঙ্গে অন্য একটি সূত্র প্রস্তাবনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
এই পরিকল্পনা ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শিবিরের কড়া সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে। কারণ, এতে যুক্তরাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে রক্ষার জন্য সামরিকভাবে প্রত্যুত্তর দেওয়ার দায়ভার নিতে হতে পারে। অর্থাৎ দেশের সামরিক অংশগ্রহণের পথ পুরোপুরি বন্ধ নয়।