রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া জানিয়েছেন, স্বামীর দেহ থেকে গোপনে সংগৃহীত নমুনার পরীক্ষায় প্রমাণ মিলেছে যে, তাঁকে কারাগারে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, অন্তত দুটি ভিন্ন দেশের স্বতন্ত্র ল্যাবরেটরিতে ওই পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হয় এবং উভয় ক্ষেত্রে একই ফল এসেছে।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অবশ্য এই বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ৪৭ বছর বয়সী নাভালনি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আর্কটিক সার্কেলের উত্তরে অবস্থিত একটি সাইবেরীয় দণ্ড শিবিরে মৃত্যুবরণ করেন। রাশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, হাঁটার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অজ্ঞান হয়ে যান। তবে শুরু থেকে ইউলিয়া তাঁর স্বামীর মৃত্যুর জন্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করে আসছেন। মস্কো অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
নাভালনির মৃত্যুর পর বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ইউরোপের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার দূতাবাসের সামনে মানুষ সমবেত হয়ে স্লোগান দেয়—‘পুতিন একজন খুনি’।
ইউলিয়া নাভালনায়া বলেন, ‘দেড় বছর আগে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আমরা অ্যালেক্সেইয়ের হত্যাকাণ্ড তদন্ত করব। আজ সেই প্রতিশ্রুতি আমরা রক্ষা করেছি।’ তাঁর দাবি, নাভালনির হত্যাকারীরা প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করলেও কিছু জৈব নমুনা সংগ্রহ করে বিদেশে পাঠানো সম্ভব হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, অ্যালেক্সেইকে হত্যা করা হয়েছে, নির্দিষ্ট করে বললে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা।’ তবে কোন ধরনের বিষ ব্যবহার করা হয়েছিল, তা প্রকাশ করেননি তিনি। সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরিগুলোকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করার আহ্বান জানান ইউলিয়া।
নাভালনি বলেন, ‘অ্যালেক্সেই শুধু আমার স্বামীই ছিলেন না, তিনি আমার বন্ধু এবং আমাদের দেশের আশা-ভরসার প্রতীক ছিলেন। পুতিন সেই আশাকে হত্যা করেছেন।’
২০২১ সালে নাভালনি জার্মানিতে চিকিৎসা শেষে রাশিয়ায় ফেরেন। তার আগে তাঁকে সোভিয়েত যুগের নার্ভ এজেন্ট নভিচক দিয়ে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। দেশে ফেরার পরপরই তিনি গ্রেপ্তার হন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগে কারাবন্দী ছিলেন।
অবশেষে ‘পোলার উলফ’ নামে পরিচিত কঠোর সাইবেরীয় কারাগারে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর কয়েক দিন তাঁর পরিবারকে মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি, যা স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে তোলে।