ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় তিনি কাজ করতে প্রস্তুত। যদিও ইউরোপের মিত্ররা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এই খসড়া রুশ স্বার্থের পক্ষে ঝুঁকে আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জেলেনস্কির দপ্তর নিশ্চিত করে যে তিনি প্রস্তাবিত পরিকল্পনার একটি খসড়া পেয়েছেন এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলবেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, পরিকল্পনার বিষয়বস্তু নিয়ে সরাসরি কিছু বলেনি জেলেনস্কির দপ্তর। তবে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি ‘ইউক্রেনের জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক নীতিগুলো’ তুলে ধরেছেন।
জেলেনস্কির দপ্তরের বক্তব্য, ‘ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্ভাবনা এবং শান্তি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় মূল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন।’
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ২৮ দফার ওই পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ও অস্ত্র ত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস নাম প্রকাশ না করা এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, খসড়া পরিকল্পনায় রাশিয়াকে পূর্ব ইউক্রেনের কিছু এলাকা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে, যেগুলোর ওপর মস্কোর এখন নিয়ন্ত্রণ নেই। বিনিময়ে ইউক্রেন ও ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গ্যারান্টি রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এক মাস ধরে এই পরিকল্পনায় চুপিসারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউক্রেন ও রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোন শর্ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে, সে বিষয়ে পরামর্শও নেওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট।
তিনি পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট অংশ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি বলেন, ট্রাম্প এ সম্পর্কে অবহিত এবং তিনি পরিকল্পনাটিকে সমর্থন করেন। লেভিট বলেন, ‘এটা রাশিয়া ও ইউক্রেন—দুই পক্ষের জন্যই ভালো পরিকল্পনা। আমরা মনে করি দুই পক্ষই এটিকে গ্রহণ করতে পারবে। আমরা দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ করছি।’
পরে জেলেনস্কি জানান, তিনি কিয়েভে যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি সেক্রেটারি ড্যানিয়েল ড্রিসকলের সঙ্গে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। টেলিগ্রামে তিনি লেখেন, ‘আমাদের দুই পক্ষ, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনার পয়েন্টগুলো নিয়ে কাজ করবে। আমরা গঠনমূলক, সততার ভিত্তিতে এবং দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’ তবে তিনি সরাসরি পরিকল্পনার বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু বলেননি।
রাশিয়া অবশ্য নতুন যুক্তরাষ্ট্র উদ্যোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘বর্তমানে কোনো ধরনের পরামর্শ চলছে না। যোগাযোগ আছে, কিন্তু তাকে পরামর্শ বলা যাবে না।’
জেলেনস্কি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত দিলেও ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা প্রকাশ করেছে সন্দেহ।
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ–নোয়েল ব্যারো বলেন, ‘ইউক্রেনের মানুষের শান্তি চাই—ন্যায়ানুগ শান্তি, যেখানে সার্বভৌমত্বের সম্মান থাকবে। এমন শান্তি, যা ভবিষ্যৎ আগ্রাসনে ভেঙে পড়বে না। কিন্তু শান্তি কোনো আত্মসমর্পণ হতে পারে না।’
ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাইয়া কালাস বলেন, শান্তি পরিকল্পনা এগোতে হলে ইউরোপ ও ইউক্রেন উভয়ের সমর্থন জরুরি। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাও সিকোরস্কি বলেন, ইউরোপের নিরাপত্তা ‘সংকটে’ আছে এবং যেকোনো সম্ভাব্য সমঝোতায় ইউরোপকে অবশ্যই পরামর্শ নিতে হবে।
তিনি যোগ করেন, ‘আশা করি যে বিধিনিষেধটা ভুক্তভোগীর ওপর চাপানো হবে না, বরং আগ্রাসনকারী পক্ষের ওপরই থাকবে।’