আয়ারল্যান্ডে বহুদিন ধরেই মদ্যপান একটি সামাজিক সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। দেশটির গ্রামীণ অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানী ডাবলিন পর্যন্ত বন্ধুদের আড্ডা, উৎসব বা ছোটখাটো উদ্যাপন—প্রায় সব ক্ষেত্রেই মদ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। দেশটির অনেক তরুণ-তরুণী অল্প বয়সেই মদের সঙ্গে পরিচিত হন। ১৪-১৫ বছর বয়সেই অসংখ্য আইরিশ মদ্যপান শুরু করেন, আর কারও বয়স ১৭ হয়ে গেলেই বাবা নিজে তাঁকে পাব-এ নিয়ে কড়া বিয়ারের পিন্ট ধরিয়ে দেন। এ যেন এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে গড়ে ওঠা অভ্যাসের ধারাবাহিকতা।
তবে দীর্ঘদিনের এই সামাজিক অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আয়ারল্যান্ড সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। ২০২০ সাল থেকে দেশটির সুপারমার্কেট ও দোকানগুলোতে অন্যান্য পণ্য থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যারিকেড দিয়ে মদের তাকগুলোকে আলাদা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০২৩ সালে মদের বোতলে সতর্কতা লেবেল লাগানোর আইন করেছে সরকার। এসব লেবেলে বলা হচ্ছে—মদ্যপান লিভারের রোগ সৃষ্টি করে, প্রাণঘাতী ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, এমনকি গর্ভে ভ্রূণের ক্ষতিও করতে পারে।
এদিকে কিছু বোতলে এসব লেবেল ইতিমধ্যেই দেখা গেলেও এই আইনটির বাধ্যতামূলক প্রয়োগ ২০২৮ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে নেওয়া হয়েছে। সরকার বলছে, বৈশ্বিক বাণিজ্যের অনিশ্চয়তার কারণেই এই বিলম্ব। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন—মদ শিল্পের লবিংয়ের চাপই এর মূল কারণ। লেবেল লাগানোর বিরোধিতা করে ‘ড্রিংকস আয়ারল্যান্ড’ নামে একটি শিল্প সংগঠন দাবি করেছে—‘যদি এমন লেবেল লাগাতেই হয়, তবে তা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জুড়ে একসঙ্গে প্রয়োগ করা উচিত।’
এই বিষয়ে রোববার (৩০ নভেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, আইরিশ তরুণ সমাজের মদ্যপানের ধরন বদলালেও মোটামুটি উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। গত ২৫ বছরে দেশটির সামগ্রিক মদ্যপান প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। তরুণেরা এখন গড়ে ১৭ বছর বয়সে মদ খাওয়া শুরু করেন—যা দুই দশক আগের তুলনায় দুই বছর বেশি। কিন্তু একবার শুরু করলে অল্প সময়েই তাঁরা ইউরোপের অন্যতম ভারী মদ্যপায়ীতে পরিণত হচ্ছেন। ২০২৪ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আয়ারল্যান্ডের ১৫-২৪ বছর বয়সীদের ৭৫ শতাংশ মদ পান করে এবং প্রতি তিনজনের দুজন নিয়মিত ‘বিঞ্জ ড্রিংকিং’ বা মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, সতর্কতা লেবেল কাজে দিচ্ছে। তবে ২৩ বছরের আমান্ডার মতো অনেকেই বলেন—মানুষ এসব তেমন গুরুত্ব দেবে না। আর শন নামের এক যুবক বললেন, ‘সবাই জানে মদ ক্ষতিকর, তবুও তো পান করি।’
অন্যদিকে স্যাম, হেলেন বা মার্কের মতো অনেক তরুণ মদ ছাড়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। কেউ স্বাস্থ্য সচেতনতা থেকে, কেউ বা অর্থ সাশ্রয়ের কারণে।
তবে জ্যাকের মতো তরুণেরা মনে করেন—আয়ারল্যান্ডের সংস্কৃতিতে মদ এতটাই জড়িয়ে আছে যে পুরোপুরি ভদ্রলোক হওয়া কঠিন। সহজ স্বীকারোক্তিতে তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিন্ট ধরেই ফেলি।’
সরকারি বিলম্ব, সামাজিক অভ্যাস ও তরুণদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া—সব মিলিয়ে আয়ারল্যান্ডে মদ্যপান সংস্কৃতিকে বদলানো এখনো কঠিন এক চ্যালেঞ্জই রয়ে গেছে।