হোম > বিশ্ব > এশিয়া

রাখাইনে আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রা নিয়ে কেন ভাবতে হচ্ছে চীন ও ভারতকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় জ্বলছে রাখাইন রাজ্যের রামরি দ্বীপের একটি গ্রাম। ছবি: এএফপি

মিয়ানমারের পশ্চিম সীমান্তে রাখাইন রাজ্য এখন এক নাটকীয় মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আরাকান আর্মি (এএ) বর্তমানে এ রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৪টির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং পুরো রাজ্য মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে।

আজ রোববার (২৪ আগস্ট) আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পরিস্থিতি শুধু মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ নয়, বরং আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতেও বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রাখাইন রাজ্যটি বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী। এখানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও জ্বালানি প্রকল্প, যা চীন ও ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাখাইনের রাজধানী সিত্তে শহরসহ রাজ্যটির অবশিষ্ট অঞ্চলও দখলের ঘোষণা দিয়েছে আরাকান আর্মি। সিত্তে বর্তমানে অবরুদ্ধ। স্থলপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহরটিতে এখন শুধু সমুদ্র ও আকাশপথে যাতায়াত সম্ভব। এই অবস্থায় রাজ্যজুড়ে খাদ্যাভাব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাখাইনের ২০ লাখের বেশি মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে। খাবারের দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। বাঁচার জন্য অনেক পরিবার ভিক্ষাবৃত্তি বা অন্য কোনো চরম উপায় গ্রহণ করছে।

আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনী তথা জান্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও বাড়ছে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ‘ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান’ (ইউএলএ) দাবি করেছে, ২০২৩ সালের শেষদিক থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ৪০২ জন বেসামরিক নাগরিক জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬টি শিশুও রয়েছে।

একদিকে জান্তা বাহিনী নিয়মিত বিমান হামলা চালাচ্ছে, অন্যদিকে আরাকান আর্মি রাজ্যের পুরুষ ও নারী উভয়কেই যুদ্ধে যোগ দিতে বাধ্য করছে।

রাখাইন রাজ্য বহুদিন ধরে রোহিঙ্গা সংকটে আলোচিত। ২০১৭ সালের সেনা অভিযানে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের শরণার্থীশিবিরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আবারও রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এবারের অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। সংগঠনটি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী এখন অস্ত্র দিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাখাইনের কিয়াউকফিউ বন্দর ও পাইপলাইন প্রকল্প সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এখানে সেনাবাহিনীর প্রায় তিন হাজার সদস্য অবস্থান করছেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে, আরাকান আর্মি ১০ হাজার যোদ্ধা নিয়ে এ বন্দর দখলে বড় ধরনের অভিযান চালাতে পারে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এটি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও কৌশলগত লড়াই হয়ে উঠতে পারে। চীন আপাতত নিরপেক্ষ থাকলেও তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করাই প্রধান অগ্রাধিকার।

ভারতও এ সংঘাতের দিকে গভীর নজর রাখছে। ভারতের ‘কালাদান’ পরিবহন প্রকল্পের জন্য সিত্তে বন্দর ও নদীপথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করবে। আরাকান আর্মি যদি এসব পথে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, তবে তারা ভারতীয় বাণিজ্য থেকে মাশুল আদায় করতে পারে।

রাখাইনের কিয়াউকফিউ বন্দরে চীনা মালিকানায় একটি তেল শোধনাগার স্থাপন করা হয়েছে। ছবি: এএফপি

আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাখাইনে আরাকান আর্মি যদি পুরোপুরি প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তবে তারা শুধু মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ শক্তি নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও বড় প্রভাবক হয়ে উঠবে। তবে মিয়ানমারের সেনাশাসকেরা আবারও শক্তি সঞ্চয় করছে এবং নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও এ নির্বাচনকে ভুয়া হিসেবে আখ্যায়িত করছে বিভিন্ন মহল।

আরাকান আর্মি ও তাদের রাজনৈতিক শাখা বলছে—এ লড়াই শুধু টিকে থাকার নয়, বরং জাতীয় মুক্তির যুদ্ধ। তবে স্থানীয় মানুষদের জন্য এ যুদ্ধ এখন দুর্ভিক্ষ, ভয় ও অনিশ্চয়তার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

৮০ হাজার মানুষের সামনে শিশুকে দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাল তালেবান, জাতিসংঘের নিন্দা

মিয়ানমারে আফিম চাষ বেড়েছে বহুগুণ, সংঘাত ও দারিদ্র্যে চোরাচালানে জড়াচ্ছেন কৃষকেরা

এশিয়ার চার দেশে বন্যা-ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ১১০০ ছাড়াল

এশিয়াজুড়ে বন্যা–ভূমিধসের তাণ্ডব, মৃতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়াল

প্রথমবারের মতো কাঠমান্ডুতে মৎস্য মেলার আয়োজন করল বাংলাদেশ

বন্যায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ এশিয়া, চার দেশে ৬০০ জনের প্রাণহানি

ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় নিহতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়াল

বিদেশে থাকা নাগরিকেরা ফিরতে চাইলে স্বাগত জানানো হবে: মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান

ঘূর্ণিঝড়ে শ্রীলঙ্কায় মৃত বেড়ে ১৫৩, আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রার্থনা

থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা, ভ্রমণের আগে পর্যটকদের যা জানা দরকার