জাপানের উচ্চকক্ষের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শিগিরু ইশিবার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্বাধীন জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এই পরাজয় ইশিবার পদত্যাগ অথবা পার্লামেন্টে রাজনৈতিক অচলাবস্থা পর্যন্ত গড়াতে পারে।
প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন জোটের শরিক এলডিপি এবং কোমিতো সম্মিলিতভাবে ৪৭টি আসন পেতে যাচ্ছে, যা উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ৫০টি আসনের চেয়ে কম। জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-এর আজ সোমবার সকালের প্রক্ষেপণ অনুসারে, এলডিপি ৩৯টি এবং কোমিতো ৮টি আসন পেতে যাচ্ছে। গত অক্টোবরে নিম্নকক্ষের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর ইশিবার নেতৃত্বে এটি এলডিপি-র দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচনে বড় ধাক্কা।
তবে নির্বাচনে এমন ফলাফল সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ইশিবা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আপাতত পদে থাকবেন। গতকাল রোববার রাতে এনএইচকে-কে তিনি বলেন, তাঁর দলের এখনও ‘জাতির প্রতি দায়িত্ব রয়েছে যা আমাদের পালন করতে হবে’। অন্য একটি টিভি অনুষ্ঠানে তিনি নিশ্চিত করেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধান হিসেবে পদে থাকতে চান।
জনতোষণবাদী বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর দ্য পিপল (ডিপিপি) এবং সানসেইতো, উল্লেখযোগ্যভাবে আসন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। ডিপিপি ১৭টি আসন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে পার্লামেন্টে তাদের মাত্র ৪ জন আইনপ্রণেতা ছিলেন।
ছোট ডানপন্থী দল সানসেইতো, যাদের মাত্র একজন আইনপ্রণেতা ছিলেন, তারা এবার ১৪টি আসন পেয়ে পর্যবেক্ষকদের চমকে দিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপান (সিডিজি) ২১টি আসন পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, নিপ্পন ইশিন নো কাই ৭ টি, জাপানিজ কমিউনিস্ট পার্টি এবং রেইওয়া শিনসেনগুমি ৩টি করে আসন পাবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সানসেইতো এবং ডিপিপি-র উত্থান ভোটারদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান এলডিপি-বিরোধী মনোভাবের ফল। কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হানাকো ওহমুরা বলেন, ‘সানসেইতো এবং ডিপিপি-র মতো দলগুলো সেই এলডিপি-বিরোধী মনোভাবের ধারক হিসেবে কাজ করেছে।’
নির্বাচনী প্রচারের ১৭ দিন মূল দুটি বিষয় ছিল ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদেশি সম্প্রদায় সম্পর্কিত নীতি। বিরোধী দলগুলো মূল্যস্ফীতি কমাতে কর কমানোর আহ্বান জানালেও, ক্ষমতাসীন জোট বিদেশি বাসিন্দাদেরসহ সবার জন্য নগদ অর্থ সহায়তা এবং শিশু-যত্ন ও নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
এই ফলাফল ইশিবা প্রশাসনকে ব্যাপকভাবেই চাপে ফেলবে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনার কারণে তিনি আপাতত পদে থাকতে পারলেও, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পদত্যাগের চাপ বাড়তে পারে।
জিজি প্রেসের অনুমান অনুযায়ী, রোববারের উচ্চকক্ষের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। যেখানে ২০২২ সালের পূর্ববর্তী উচ্চকক্ষের নির্বাচনে এ হার ছিল ৫২ দশমিক ০৫ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার নির্বাচনের আগে ২৫ শতাংশের বেশি ভোটার তাঁদের ভোট দিয়েছেন।